দুর্গোৎসব আনন্দময় হউক: ড. আবু সিনা ছৈয়দ তারেক

ড. আবু সিনা ছৈয়দ তারেক: বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। বাংলাদেশে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে চলেছে প্রায় প্রতি বছর। একটি সম্প্রদায়ের স্বাধীন ভাবে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করার অধিকার এ দেশের সংবিধান দিয়েছে।

এ দেশে বসবাসকারী বেশীর ভাগ জনগোষ্ঠী যেহেতু মুসলিম, সেহেতু দূর্গা পূজা কালীন সময়ে যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, তখন প্রথমেই এ ঘটনার পিছনে মুসলিমদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে চলে আসে এবং কখনও কখনও মুসলিম সস্পৃক্ততা পাওয়াও যায়। তখন সেটা আবার রাজনৈতিক কালচারের দোহাই দিয়ে আড়ালে চলে যায়, বিচার হয় না বা হলেও দীর্ঘ জটিলতায় বাধা পড়ে। এটি খুবই দু:খ জনক।

সাংবিধানিক অধিকার যদি কেহ হরণ করে বা করার চেষ্টা করে তাহলে তার বিচার রাজনৈতিক কারনে বাধা গ্রস্থ হবে কেন? একজন মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসী হিসেবে আমি যখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বা এদেশে বসবাসকারী অন্য কোন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান, মন্ডপ ভাংচুরের সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা দেখি তখন অনেক কষ্ট পাই।

ইসলাম অনুসারীদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি কেমন আচরণ করবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুস এর ৯৯ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে – “আপনার প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে পৃথিবীর সকল মানুষই বিশ্বাস করতো (ঈমান আনতো)। তাহলে আপনি কী তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের উপর বল প্রয়োগ করবেন?” এভাবে সৃষ্টিকর্তা, মুহাম্মদ (স:) ও তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করেছেন।

এ আয়াতের মূল কথা হচ্ছে- সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করে তাকে বুদ্ধি, জ্ঞান, বিবেক (ভালো-মন্দ বিচার ক্ষমতা) এবং ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তিনি মানুষের কল্যানের জন্য আকাশ ও মাটিতে নানা ধরণের সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তা চান মানুষ এসবের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক এবং তাঁকে স্বীকার করুক ও বিশ্বাস করুক। বিশ্বাস যেহেতু অন্তরের ব্যাপার, তাই সৃষ্টিকর্তা জোর করে কারো উপর বিশ্বাস চাপাতে চান না।

তাই, সৃষ্টিকর্তা মানুষের সামনে তাঁর বাণী প্রচার করতে বলেছেন। বল প্রয়োগ করে বিশ্বাস করাতে নিষেধ করেছেন। অথচ আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেও তাঁর নির্দেশ অমান্য করে অন্য ধর্মের অনুসারীদের (সনাতন, বৌদ্ধ, থ্রিস্টান) সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা করছে কেউ কেউ। ঠিক একই ভাবে অন্য ধর্মাবলম্বী কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীও যদি মুসলিম বিশ্বাসের উপর আঘাত আনে সেটিও কাম্য হতে পারে না।

আবার ধর্মীয় আচার পালন করার সময় যদি ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরীর চেষ্টা করা হয়, কোন ঘটনা ঘটে, সেটিও জনগণের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় আচারাদি আনন্দের সাথে উদযাপন করুক। এ বছরের (২০২২ সালের) সারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ হউক এ প্রত্যাশায় রইলাম।

ড. আবু সিনা ছৈয়দ তারেক
সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা