সুন্দরবনের কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন?

পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন

বিশ্বের একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পর্যটকদের বছরজুড়েই উপভোগ করতে আসা-যাওয়া থাকেই। তবে, শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে।

সুন্দরবনে বাঘ মামাকে দেখতে আসা পর্যটকদের চাপ সামলাতে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ট্যুরিজম সেন্টার।

তবে সুন্দরবন ভ্রমণের আগে জেনে নিন, কখন যাবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন বা কাদের সাথে যাবেন। ভ্রমণপিপাসু পাঠকদের কথা ভেবে সুন্দরবন ভ্রমণের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো-

কি দেখতে যাবেন: সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার,বণ্যশুকর, বানর, চিত্রল হরিণ, কুমির, কচ্ছপ, উদবিড়াল, ডলফিন, মেছোবিড়াল ও বন বিড়ালসহ রয়েছে ৩৭৫ এর অধিক প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। সেই সাথে সুন্দরবনজুড়ে জালের মতো জড়িয়ে থাকা ৪৫০টি ছোট বড় নদী-খাল ভ্রমণের অপার সুযোগ পাবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

সুন্দরবনের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণির বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবন জুড়েই পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার অপার সুযোগ রয়েছে। তবে, এরমধ্যে শরণখোলার টাইগার পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কটকা, কচিখালীর অভয়ারণ্য কেন্দ্র, করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, কলাগাছিয়ায় ইকোট্যরিজম সেন্টার, হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, দুবলারচর, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যাটকদের আনাগোনা বেশি থাকে।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: সুন্দরবনের ভেতরে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের সুন্দরবনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে তাদের বহনকারী নৌযানেই ব্যবস্থা করতে হয়। তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা বিশ্রামাগারেও অবকাশ যাপনের সুযোগ করে নিতে পারেন।

সুন্দরবন ভ্রমণে খরচ: ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে দশ থেকে ১৫ হাজার টাকায় তিন দিন-দুইরাত সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে যে সব পর্যটকরা সুন্দবন ভ্রমণ করতে চান তারা সাধারণত বাগেরহাট অথবা খুলনায় আসার পর পর্যটক বহরে যুক্ত হন। ভ্রমণকারীদের অনেকে আবার ট্যুর কোম্পানি ছাড়া নিজেরা নৌযান ভাড়া নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।

কিভাবে যাবেন সুন্দরবনে: রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সুন্দরবনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সুন্দরবন ঘুরতে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে বাসে এবং লঞ্চে করে বাগেরহাটে যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে। সেক্ষেত্রে নন-এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে সড়ক পথে বাগেরহাটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। বাগেরহাটে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক পথে পাড়ি দিয়ে যেতে হবে মোংলা। মোংলা থেকে নৌযানে করে কিছুদূর যাওয়ার পরেই সুন্দরবনের দেখা মিলবে।

সুন্দরবনের ভ্রমণের কোথায় কত ফি দিতে হবে: সুন্দরবনের ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী অভয়ারণ্য ছাড়া জনপ্রতি প্রতিদিন দেশি পর্যটকদের ফি দিতে হবে ৭০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের (১২ বছরের নিচে) ১৫ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য এক হাজার টাকা। অন্যদিকে, অভয়ারণ্য এলাকায় ভ্রমণের জন্য দেশি পর্যটকদের ১৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের এক হাজার ৫০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা ফি দিতে হবে। আর শুধু করমজল এলাকা ভ্রমণে দেশি পর্যটকদের ২০ টাকা, বিদেশিদের ৩০০ টাকা, অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা, দেশি গবেষকদের ৪০ টাকা এবং বিদেশি গবেষদের জন্য ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নিবন্ধনকৃত নৌযানের বিভিন্ন রকমের প্রবেশ ফি দিতে হয়। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চ হলে এক হাজার টাকা, ৫০ ফুটের ওপরে ১০০ ফুটের নিচে ৮০০ টাকা, ৫০ ফুটের নিচে ৫০০ টাকা, ট্রলার ৩০০ টাকা, দেশি নৌকা ১০০ টাকা, স্পিডবোট দুই হাজার টাকা। স্পিডবোট (মাদার ভেসেলের সাথে) ৫০০ টাকা, জালিবোট (ট্যুরিস্টবোট) ২০০ টাকা। এসব ফির সাথে ভ্যাট দিতে হবে পর্যটকদের। প্রতিদিনের জন্য লঞ্চের অবস্থান ফি ৩০০ টাকা। প্রতিটি নৌযানে বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রহরী দেয়া হয়।

আরও পড়ুন :-  পর্যটকদের দেখা নেই সাতছড়িতে

এছাড়া কটকা, কচিখালী ও নীলকমল বিশ্রামাগারে প্রতিটি কক্ষ প্রতিদিন ভাড়া দেশি পর্যাটকদের জন্য দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি পর্যাটকদের চার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়।

ভ্রমণকারীদের জন্য থরে থরে সৌন্দর্য সাজিয়ে রেখেছে সুন্দরবন। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবন দেখে মুগ্ধ হবেন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকেরা। তাই সময় করে, এই শীত মৌসুমেই প্রিয়জনদের নিয়ে দেখা করে আসুন বাঘ মামা ও মায়া হরিণের সাথে।