দুর্গাপুরের আসল সৌন্দর্য বলা হয়ে থাকে সোমেশ্বরী নদীকে
প্রকৃতি আমাদের দুশ্চিন্তা বা ক্লান্তি দূর করে মনকে দিতে পারে প্রশান্তি। বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের প্রতি বছরই একটি নতুন জায়গায় ভ্রমণ করা উচিত। কিন্তু আপনাকে যখন সপ্তাহের ছয় দিনই কাজ করতে হয়, তখন বিলাসবহুল কোনো ভ্রমণ পরিকল্পনা করা সম্ভব নাও হতে পারে। আপনি যদি একদিনের মধ্যেই গোলাপী পাহাড়, নীল জলের পুকুর আর নদীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে।
স্বর্গীয় এই স্থানটির অবস্থান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখান থেকেই উপভোগ করা যায় মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য। দেশের অন্যান্য পর্যটন স্পটের মতো প্রচারণা না থাকলেও, দুর্গাপুর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর স্থান।
চলুন জেনে নেই দুর্গাপুর সম্পর্কে আকর্ষণীয় কিছু তথ্য:
সোমেশ্বরী নদী
দুর্গাপুরের আসল সৌন্দর্যই বলা হয়ে থাকে এই সোমেশ্বরী নদীকে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সোমেশ্বরী নদী। এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে রানিখং পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে।পাহাড়, নদী আর গাছপালা দিয়ে ঘেরা নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য আপনার নজর কাড়বেই।
এক সময় সিমসাং নামে পরিচিত থাকলেও, সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ ওই অঞ্চল দখল করে নিলে নদীটি পরিচিতি পায় সোমেশ্বরী নামে। আবার সিমসাংগ্রি থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে এর নাম সোমেশ্বরী রাখা হয়েছিল, এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে।
এক এক ঋতুতে এই নদী এক এক রূপ লাভ করে। বর্ষায় এই নদীর পানি বেড়ে গেলেও, শীতে এখানে হাঁটুজল থাকে। সেই হাঁটুজলে পা ভিজিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা মনে গেঁথে থাকবে চিরকাল।
বিরিশিরি চীনামাটির পাহাড়
বিরিশিরির মূল আকর্ষণ এখানকার চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ এক হ্রদ। তবে অপূর্ব এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হতে হলে যেতে হবে বিরিশিরি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে।
এই পাহাড় থেকে মাটি কাটার ফলে সৃষ্টি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর হ্রদের। নীল জলের এই হ্রদ যে কারো ক্লান্তি-অবসাদ দূর করবে নিমিষেই। এছাড়া চীনামাটির এই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরুপ সোমেশ্বরী নদী।
হাজং রাশমণি স্মৃতিস্তম্ভ
বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার সময় আপনার চোখে পড়বে রাশমণি হাজংয়ের সাহসী ত্যাগের স্মরণে নির্মিত হাজং রাশমণি স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৩৮ সালে নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহের নৃগোষ্ঠীর কৃষকরা হাজং রাশমনির নেতৃত্বে টনক আন্দোলন নামের একটি সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। এর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে রাশমণি হাজংকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বৈরশাসকরা। তাই রাশমণির স্মরণে নির্মিত এই সৌধটি স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি পর্যটকদেরকে অনুপ্রাণিত করে নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য।
বিজয়পুরের বিজিবি ক্যাম্পের কাছে অবস্থিত কমলা পহাড়ও ঘুরে দেখতে পারেন, যেটি দুর্গাপুরের আরও একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এছাড়া বিজিবি ক্যাম্পের পাশে রাণীখং গীর্জাতেও আপনি কিছু সময় কাটাতে পারেন। ১৯১০ থেকে ১৯১৫ সালের দিকে পবিত্র এই স্থানটি নির্মিত হয়। ছোট একটি পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক এই গীর্জাটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
দুর্গাপুরে আপনি দুটি নৃগোষ্ঠী- হাজং এবং গারোদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এই জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে অবস্থিত উপজাতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি থেকে ঘুরে আসতে পারেন যেটি সাবেক মহারাজা সুসাং-এর রাজপ্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
যেভাবে দুর্গাপুর যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করেই যেতে পারবেন দুর্গাপুরে। রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিরিশিরির উদ্দেশে যাওয়া বাসে উঠতে হবে আপনাকে। পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় সাত ঘণ্টা। বিরিশিরির কাছের রাস্তাটি ভালো না হওয়ায় যাত্রার শেষের কয়েক ঘণ্টা কিছুটা ধকল সামলাতে হবে। তবে বাসের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় বেশি লাগলেও বিরিশিরির উদ্দেশে ট্রেন যাত্রা তুলনামূলক আরামদায়ক।