কতটুকু পরিশুদ্ধ হচ্ছি সিয়ামে

সিয়াম পালন

সিয়াম পালনের মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজেকে জান্নাতের উপযোগী করে গড়ে তোলেন। সিয়াম পালন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। এটা ফরজ। ইসলামের পাঁচ রুকনের একটি।

একটি রুকন অস্বীকার করলে তো ইমানই থাকবে না। আর জান্নাত তো বেইমানদের জন্য হারাম ঘোষিত হয়েছে। ওদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। জান্নাত শুধু মুমিন বান্দার জন্য বরাদ্দ। শুধু মুমিন হলেই চলবে না।

সঙ্গে সঙ্গে হতে হবে মুত্তাকিও। তাহলেই আমি আপনি হতে পারব জান্নাতের চিরস্থায়ী বাসিন্দা। একবার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলে কেউ আর সেখান থেকে আমাকে আপনাকে বের করতে পারবে না।

তাই যিনি জান্নাতের মালিক, যিনি জান্নাত দান করবেন তার ওপর পূর্ণ ইমান আনতে হবে আমাদের। রিসালাত, আখিরাত, কোরআন, জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাকে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে। তাই রোজাদারদের সবরকম ফরজ, ওয়াজিব পালন করতেই হবে।

পাশাপাশি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়েও তাকে ভয় করতে হবে। এরই নাম তাকওয়া। আর যে এ গুণ অর্জন করতে পারে তাকে বলা হয় মুত্তাকি। যে কোনো ইবাদত, যে কোনো সামাজিকতা, লেনদেন, আচার-অনুষ্ঠান সব ক্ষেত্রেই থাকতে হবে তাকওয়ার উপস্থিতি। অর্থাৎ আল্লাহভীতি।

আল্লাহ ছাড়া এমন আর কেউ কি আছেন যাকে ভয় করা যায়, মানা যায়? না, না। তিনিই একমাত্র সিজদার যোগ্য। আর বান্দাকে ক্ষমা করার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। (সুরা মুদ্দাসসির : ৫৬)।

জি, মুত্তাকিরাই হবে জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা। কোরআনে কারিমে ঘোষণা এসেছে, এ সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকিদের। (সুরা মারইয়াম : ৬৩)। মুত্তাকিদের যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে (সুরা রাদ : ৩৫, সুরা মুহাম্মাদ : ১৫) তার উপমা হল, এর পাদদেশে নহরগুলো প্রবাহিত, এর ফলফলাদি ও ছায়া চিরস্থায়ী। যারা মুত্তাকি এ ব্যবস্থা তাদের জন্যই। আর কাফিরদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে আগুন (জাহান্নাম)। (সুরা রাদ : ৩৫)।

জান্নাতি হতে হলে আমাকে আপনাকে মুত্তাকি হতে হবে। কিন্তু কীভাবে মুত্তাকি হব? কোথায় কোথায় তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে? এটা জানতে হলে জানা দরকার যে, কোন কোন বিষয়ে আল্লাহ আমাদের তাকে ভয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, কুধারণা, ছিদ্রান্বেষণ, গিবত ইত্যাদি। (সুরা হুজুরাত : ১২)। দ্বীনবিরোধী কোনো গোপন শলা-পরামর্শের ক্ষেত্রে। (সুরা মুজাদালা : ৯)। সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে। (সুরা আন’আম : ৭২)। হজের যাবতীয় কাজে। (সুরা বাকারা : ১৯৬-১৯৭, ২০৩)।

যারা মুত্তাকি তাদের প্রশংসা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই। যেমন, তাকওয়া অবলম্বনে নির্মিত মসজিদের প্রশংসা করেছেন। (সুরা তাওবা : ৮-৯)। যারা দ্বীনের ঐতিহ্যকে সম্মান প্রদর্শন করে তাদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এটা অন্তরের তাকওয়া নিসৃত আমল।’ (সুরা হাজ : ৩২)।

জেনেশুনে কেউ কি আছেন যিনি জাহান্নামে যেতে চান? ইন্নালিল্লাহ। ও মাবুদ! জাহান্নাম থেকে হিফাজত কর আমাদের। তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে আমাদের আমলগুলো হতে হবে তাকওয়ানির্ভর। ‘তাকওয়ার ভিত্তিতে যারা সম্পদের জাকাত আদায় করেন তাকে (জাহান্নাম থেকে) অচিরেই দূরে রাখা হবে।’ (সুরা লাইল : ১৭-১৮)।

আমাদের দিলকে করতে হবে পঙ্কিলতামুক্ত। নাফসকে ঝালাই করে পবিত্র করতে হবে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নাফসের স্তরগুলো ওপরে ওঠানো যায়। নাফসে আম্মারা (কুপ্রবৃত্তিপ্রবণ হৃদয়), নাফস মুলহামা (ভালোমন্দ সম্পর্কে জ্ঞাত মন), নাফস লাউওয়ামা (তিরস্কারী দিল) ও নাফস মুতমাইন্নাহ (প্রশান্ত আত্মা)।

আরও জানতে