কোরআনের আহবান

সিয়াম পালন

মক্কার হেরা গুহায় মাহে রমজানে লাইলাতুল কদর বা সম্মানিত রজনীতে কোরআন নাজিলের সূচনা হয়। নাজিলের সময়কাল ছিল প্রায় তেইশ বছর। যার কালাম তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছুর খালিক, মালিক। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। নেই কোনো সমকক্ষ। তাই তো শিরক অবস্থায় কেউ যদি মারা যায় তার জন্য কোনো ক্ষমা নেই। সুরা নিসা : ৪৮ ও ১১৬।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সায়্যিদুস সাকালাইন, সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন। আশরাফুল খালকি আজমাঈন। অর্থাৎ তিনি মানব ও জিন জাতির সরদার। নবী ও রাসুলগণের সরদার। সব সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি তিনি। তিনিই একমাত্র রাসুল, যার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সুরা ফাতহ : ২। তিনি কেয়ামত দিবসে সায়্যিদুত্তুলদি আদম (আদম সন্তানদের সরদার), কবর থেকে যিনি সর্বপ্রথম পুনরুত্থিত হবেন, তিনিই হবেন প্রথম সুপারিশকারী, সর্বপ্রথম তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। মুসলিম : ২২৭৮।

জিবরিল আমিন ফেরেশতাদের সরদার। সব নবী-রাসুলের কাছে তিনিই নিয়ে আসতেন আল্লাহর ফরমান। তিনি ছিলেন আল্লাহর দূত। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের কাছে সম্মানিত। তিনি সবার মান্যবর, সেখানকার বিশ্বাসভাজন।’ সুরা তাকওয়ির : ২০-২১।

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্থান মক্কা নগরী। কোরআনে এ নগরীকে বলা হয়েছে ‘উম্মুল কুরা’ অর্থাৎ সব জনপথের উৎস। সুরা আনআম : ৯২, শূরা : ৭। যেখানে রয়েছে হেদায়েত ও তাওহিদের নিদর্শন বরকতময় আল্লাহর ঘর। সুরা আল ইমরান : ৯৬।

কোরআন মাজিদে আরবি একটি মাসের নাম উচ্চারিত হয়েছে। নামটি রমজান। আল্লাহ স্বয়ং এ মাসের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে, ‘রমজান মাস, এ মাসেই কোরআন নাজিলের সূচনা হয়েছে।’ বাকারাহ : ১৮৫। কোরআনের সৌজন্যেই রমজান বছরের সেরা মাস। যে রাতে কোরআন অবতীর্ণের সূচনা হয়, সে রাতের রয়েছে দুটি পরিচিতি। এক. লাইলাতুল কদর। সম্মানিত রজনী। সুরা ‘কদর’ নামে পাঁচ আয়াতবিশিষ্ট একটি পূর্ণ সুরা রয়েছে কোরআনে কারিমে। পড়েই দেখুন না আল্লাহ আমাদের কী পয়গাম দিচ্ছেন এ সুরায়। হাজার মাসের চেয়েও যার সম্মান বেশি। দুই. লাইলাতুম মুবারাকাহ। বরকতময় রজনী। সুরা দুখান : ২। কেন এ রজনী সম্মানিত ও বরকতময়? উত্তর- এ রজনীতে মর্যাদার আধার ও বরকতময় কোরআন নাজিলের সূচনা হয়েছে।

কী আছে আসমানি কিতাব এ মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিমে? উত্তরে বলব, দুর্ভাগা আমরা যে, আমাদের কোরআনে সবকিছু থেকেও আমরা কিছু খুঁজে পাই না। জানতে ইচ্ছা করে, কোনোদিন কি আমরা আমাদের কোনো বিষয় কোরআনে খুঁজে দেখেছি? কী নেই কোরআনে? কোরআনে রয়েছে আমার-আপনার পরিচিতি। কোরআনে রয়েছে জীবনের দর্শন। কোরআনে রয়েছে মুক্তির উপায়। মানবজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে এ কোরআনে। পারিবারিক-সামাজিক অশান্তির দাবানল থেকে মুক্তির দিশা খুঁজে পাওয়া যায় আল্লাহর এ কালামে।

রাসুলের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে এ কোরআনে। জিবরিল আমিন ধন্য হয়েছেন কোরআনের দূতিয়ালি করে। রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব কোরআনকে ধারণ করে। লাইলাতুল কদর হাজার (অসংখ্য) মাসের চেয়েও উত্তম কোরআনের সৌজন্যে। আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত শ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ কোরআনের অধিকারী হওয়ার কারণে।

কিন্তু আফসোস, সেই আমরা শ্রেষ্ঠ মাখলুক কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত জানি না। কোরআন বুঝি না। কোরআন মানি না। কী জবাব দেব কোরআনের মালিকের দরবারে? না, না। এভাবে আর চলতে পারে না। তাই প্রতিজ্ঞা করি রমজানের সৌজন্যে আমরা কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত করব। কোরআনের অর্থ বুঝব, মানব। তাহলে কোরআনের ছোঁয়ায় আমরাও হয়ে যাব মানবসেরা। দুনিয়াতেও, আখিরাতেও আমরা কামিয়াব হব। আল্লাহ কবুল করুন রমজানের অসিলায়।