শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: কাতারের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে শেয়ারবাজার, জ্বালানি, অবকাঠামো, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার (৬ মার্চ) দোহার সেন্ট রেজিস হোটেলে কাতারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা আমাদের অবকাঠামো এবং লজিস্টিক খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারকে আরও উন্নত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কঠোর পরিশ্রম করছে। আমাদের বন্ড মার্কেটকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা শিগগিরই আমাদের পুঁজিবাজারে ‘ডেরিভেটিভ’ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।

জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ আহ্বান করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। আমরা সমুদ্র গ্যাস অনুসন্ধান এবং জ্বালানি বিতরণে কাতারের দক্ষতা থেকে লাভবান হতে পারি।

বাংলাদেশে এগ্রো-প্রসেসিং শিল্পের সম্ভবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৃষি প্রবৃদ্ধি ‘বাই-ব্যাক’ ব্যবস্থাসহ এগ্রো-প্রসেসিং শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করেছি।

বিকাশমান পর্যটন খাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, যেখানে কাতার রিয়েল এস্টেট এবং সেবা সেক্টরে সম্পৃক্ত হতে পারে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ আমরা অন্তত দশটি ‘ইউনিকর্ন’ (মেগা বিনিয়োগ ও উদ্যোগ) পেতে চাই। আমাদের প্রাণবন্ত ‘স্টার্ট আপ’ কাতারের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। কাতারের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের পোর্টফোলিও হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অঞ্চলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ব্যবস্থা সবচেয়ে উদার। ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি শুল্ক, রয়্যালটি রেমিট্যান্স, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ফি, শতভাগ বিদেশি ইক্যুইটি, অবাধ বহির্গমন নীতি, লভ্যাংশের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুবিধা এবং মূলধন ফেরতসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ঝামেলাহীন বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে সব সেবা দিচ্ছে। আমাদের সরকার সমন্বিত সুবিধাসহ সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশ তাদের জন্য নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে।

যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি এবং লজিস্টিক হাবের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামোতে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করছি। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রো-রেল ব্যবস্থার মতো মেগা-প্রকল্পগুলো আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ।

তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে সমগ্র জাতিকে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট কভারেজের আওতায় নিয়ে এসেছি। আমাদের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

কাতার থেকে আরও জ্বালানিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের সংকট বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে কঠিন জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা কাতার থেকে আমাদের এলএনজি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশে আরও রফতানির সুযোগ অন্বেষণ করতে আমরা কাতারকে অনুরোধ করছি।

কাতারের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। জ্ঞান ও দক্ষতার সঙ্গে আমাদের কর্মীবাহিনী দিয়ে আমরা কাতারের উন্নত কর্মসংস্থান বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমাদের জনগণের ভালো যত্ন নেওয়ায় আমরা কাতার সরকার এবং কাতারের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।

কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও কাতার ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায় দুই দেশের জনগণের মধ্যকার চমৎকার এক সেতু। কাতারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বহু বাংলাদেশিকে দেখে আমি আনন্দিত।