করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সিটিজেন ব্যাংক লিমিটেড নামের নতুন একটি ব্যাংককে কাজ শুরুর চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিটিজেন ব্যাংককে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পেইড আপ ক্যাপিটাল (পরিশোধিত মূলধন) ৫০০ কোটি টাকাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য শর্ত পূরণের পর সিটিজেন ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
“এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সিটিজেন ব্যাংক কর্তপক্ষকে দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে চিঠি দেওয়া হবে। দেওয়া সব শর্ত মেনে ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।”
এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টিতে দাঁড়াল। এরমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের সংখ্যা নয়টি। বেসরকারি ব্যাংক ৪২টি। আর বিদেশি ব্যাংক নয়টি।
সমালোচনার মধ্যে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংককে প্রাথমিক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে বেঙ্গল ব্যাংকের উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হলেন তার ছোট ভাই বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করেছে।
পিপলস ব্যাংকের আবেদনে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান হিসেবে নাম আছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেমের।
কিন্তু ব্যাংকটি প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় সোমবারের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে এ নিয়ে ১৬টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশেষ আইনে গঠিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে গত বছর তফসিলি ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত সরকারের শেষ দিকে এই তিনটিসহ চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
তখন বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট (বিপিডব্লিউটি) এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ব্যাংক শুধু অনুমোদন পেয়েছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিসর বাড়ায় আরও ব্যাংক অনুমোদনের পক্ষে যুক্তি দেখানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে মহামারীর এই সময়ে নতুন আরও একটি ব্যাংকের অনুমোদনের তীব্র সমালোচনা করছেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ।
তিনি বলেন, “আমরা বার বার বলে আসছি, বাংলাদেশের মতো এই অর্থনীতির এই দেশে আর কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। তারপরও লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। কেন দেওয়া হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে- কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আরো পড়ুন- ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগে শরীআহ্ পরিপালন বিষয়ক ওয়েবিনার
তিনি বলেন, “যে ব্যাংকগুলো আছে সেগুলোই ঠিকমতো চলতে পারছে না। কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এই অবস্থায় আরও ব্যাংক। অবাক দেশ আমাদের।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংকের টিকে থাকা কঠিন বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।
“বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রামে যেতে চায় না। সবাই শহরে শাখা খুলে ব্যবসা করতে চায়। নতুন ব্যাংকগুলো কোথায় ব্যবসা করবে? কী ব্যবসা করবে? কীভাবে টিকে থাকবে?”