ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মৃত্যুর কাছে মানতে হল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে ।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নয় মাস ধরে ভুগছিলেন তিনি। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে ছিলেন রাজশাহীতে চিকিৎসক বোনের বাড়িতে।
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, সবাই তো ভালবাসা চায়- এমন অনেক গান নিয়ে গত শতকের ৮০ দশক থেকে শুরু করে টানা অন্তত দুই দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গানের জগতে ছিল তার রাজত্ব।
তার গাওয়া ভালবেসে গেলাম শুধু, সবাই তো ভালবাসা চায়, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল, বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে- এমন অনেক গান এখনও মানুষের মুখে ফেরে। গান গেয়ে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে; সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর।
ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতে অনুরক্ত ছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়লেও গানই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
একসময় গানের নেশায় এন্ড্রু কিশোর ছুটে আসেন রাজধানী ঢাকায়। চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে; মেইল ট্রেন-এ আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর বাদল রহমানের এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীতেও কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান গাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, এন্ড্রু কিশোর তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এক শোকবার্তায় এন্ড্রু কিশোরকে ‘যাদুকরী শিল্পী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৯০ এর দশকের শেষ দিক পর্যন্ত চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার। ওই সময়েও তার গাওয়া ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে প্লেব্যাকে শীর্ষে থাকা অবস্থাঢ বলিউডের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মনের ডাকেও এন্ড্রু কিশোর ভারতে যাননি বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু আরেক কণ্ঠশিল্পী লীনু বিল্লাহ।
বেশ কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর এন্ড্রু কিশোরের ক্যান্সার ধরা পড়ে। গত বছর সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য।
চিকিৎসা শেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ১১ জুন তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও ১০ জুন এক পরীক্ষায় তার শরীরে আবারও লিম্ফোমার অস্তিত্ব মেলে।
রোববার বিকালে এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলতে পারছিলেন না।
এন্ড্রু কিশোরের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিনি স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
আরো পড়ুন- শাকিবের কাছে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি দিলরুবার
