স্নিগ্ধ শরতের শুভ্র কাশফুল

শরৎ এসে গেল কাশফুল আর দেখা যায়  না; তা কি করে হয়। শরতের বিকেলে মনকে প্রফুল্ল করতে ঘুরে আসতে পারেন কাশবন থেকে। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় এক স্নিগ্ধ বিকেল কাটাতে এবং নগরজীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু শান্তির খোঁজে যেতে পারেন ঢাকার আশেপাশের কাশবনে। নীল আকাশজুড়ে অলস মেঘের অবাধ বিচরণ। খণ্ড খণ্ড মেঘের নিরুদ্দেশ যাত্রা।

প্রকৃতিতে এখন চলছে শুভ্র সুন্দর কাশবনের মন মাতানো রূপের খেলা। রোদের ঝলকানির পাশেই মেঘের ছায়া। মেঘ আর রোদের কানামাছি খেলার মাঝে বৃষ্টিও অংশ নিচ্ছে। এমন দিনে আপনাকে স্বাগত জানাতে কাশফুল ‘সাদা ডালি’ সাজিয়ে বসে থাকে। দক্ষিণা বাতাসে কাশফুলগুলো ঢলে ঢলে আপনার সঙ্গে কথা বলবে। আপনাকে আহ্বান জানাবে তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শরতের কাশফুলের এ রূপ সহজেই যে কারো চিত্তে দোলা দিতে বাধ্য করবে।

তাইতো শরতের বন্দনায় কবিগুরু বিমোহিত হয়েছেন বারবার। বর্ষা শেষে শরৎ আসে বলেই গাছের পাতারা হয় আরও স্নিগ্ধ, সজীব। চোখ মেললেই দেখা হয় বুনো ফুলের মাঝে রুপসী প্রজাপতি কিংবা ফড়িংয়ের সাথে। তবে ঋতুর রাণী শরতের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ কাশফুল। আকাশে ধবধবে সাদা মেঘের শতদল আর মাটিতে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ছড়ায় তাতে থাকে শুধুই মুগ্ধতা।

শরৎ হচ্ছে শুভ্রতা ও পবিত্রতার প্রতীক। আকাশে নিল-সাদা মেঘের ভেলা আর ধরণীতে শুভ্র-সফেদ কাশ ফুলে ঢেউয়ের দোলা এমন স্বর্গীয় দৃশ্যের দেখা মিলবে এই শরৎ কালেই। তাই নাগরিক যন্ত্রণা ভুলতে কিছু সময় অপু দুর্গার মত কাশবনে হারিয়ে গেলে মন্দ হয় না।

কাশফুল প্রকৃতির এক দারুণ উপহার। ইট-কাঠ পাথরের এই নগরীতেও আছে কাশফুলের সৌন্দর্য। রাজধানীর ভেতরে এবং আশেপাশেই ফুটে আছে থোকায় থোকায় কাশফুল। দু’চোখ ভরে শুভ্রতা দেখার বাসনা হোক আর কাশবনের সাদা ক্যানভাসে নিজেকে ছবির ফ্রেমে বন্দী করার ইচ্ছেই হোক, কাশবনে একটিবার নিশ্চয় যাওয়া উচিৎ এই শরৎকালে।

ঢাকার ভিতরে কাশফুল দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো স্থান হচ্ছে উত্তরার দিয়াবাড়ি। উত্তরার ১৫ নম্বার সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ি। দিয়াবাড়ির কাশবন ও লেকের সৌন্দর্য দেখার জন্য অনেকেই এখন আসেন এখানে। বিশেষ করে বিকেলবেলা ভ্রমণের জন্য দিনের পর দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উত্তরার দিয়াবাড়ি।

আপনি কাশফুলের রাজ্যে হাঁটতে হাটতে যদি আনমনা হয়ে যান। স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যান নিজের ফেলে আসা শৈশবের নদীর ধারের কাশবনে। তাহলে হঠাৎ আপনাকে এই যান্ত্রিক শহরের বাস্তবতায় চমকে দিয়ে ফিরিয়ে আনবে উড়োজাহাজ উড়ার শব্দ। দিয়া বাড়ির এই স্থানে উড়োজাহাজগুলো খুব নিচ দিয়ে উড়ে যায়। কাছ থেকে উড়োজাহাজ ওড়ার দৃশ্য দেখতে চাইলে দিয়াবাড়ি সবচেয়ে ভালো জায়গা। বাচ্চারা উড়োজাহাজ এত কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ভীষণ আনন্দিত হয়।

দিয়াবাড়িতে একটা বটগাছের দেখা পাওয়া যাবে। এই জায়গাটা দিয়াবাড়ি বটতলা নামে পরিচিত। বটতলার দুপাশে তাকালে অন্যরকম গ্রামীণ পরিবেশ দেখা যায়। এই সেই বটগাছ যা আপনি বহু নাটক ও সিনেমায় দেখেছেন। এছাড়াও দিয়াবাড়ি কাশবনেও প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো নাটক বা সিনেমার শুটিং হয়। কপাল ভালো হলে এখানে বেড়াতে এসে দেখা পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের কোনো নায়ক-নায়িকার। দিয়া বাড়ি শান বাধানো লেকের পার আপনার আনন্দ বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুণ। ইচ্ছে হলে লেকে নৌকা চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও আছে।

আরও পড়ুনঃ- ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে যে ৫ টি খাবার

উত্তরা/গাজীপুর/ টঙ্গিগামী যে কোনো বাসে করে উত্তরা হাউস বিল্ডিং এসে নামতে হবে। এখান থেকে খুব সহজেই রিকশা বা লেগুনায় চড়ে চলে যেতে পারবেন দিয়াবাড়ি লেক। এছাড়া আপনি চাইলে মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে যেতে পারেন দিয়াবাড়ী।

এছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার আশে পাশে আপনি কাশবনের দেখা পাবেন। আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, পদ্মার চর, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ৩০০ ফিট, বছিলা ব্রিজসহ আরও কিছু স্থানে কাশ ফুলের দেখা পাওয়া যায়। আপনার পছন্দ ও সুবিধামত যেকোনো স্থান বেছে নিতে পারেন কাশবন দেখার জন্য।

সতর্কতা

এতো ভালো লাগা আর সৌন্দর্যের মাঝেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে ঘুরতে হবে। সন্ধ্যার পর কাশবনের বেশি গভীরে না থাকাই ভালো। কাশফুলে মাঝে মাঝে কিছু পোকা দেখতে পাওয়া যায়। তাই কাশফুলের খুব কাছ থেকে সাবধান থাকবেন, যেন পোকা শরীরে না লাগে। সাঁতার না জানলে বালু নদের পানির কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। আর কোনো কিছু খেলে দাম জেনে খাওয়া উচিত। অনেক হকার পণ্যের গায়ে লেখা দামের বেশি নিয়ে থাকে।