তরফদার রুহুল আমিন যেভাবে বদলে দিলেন চট্টগাম সমুদ্র বন্দরের চিত্র

তরফদার রুহুল আমিন

একটি দেশের সুষম ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সমুদ্র বন্দরের ভূমিকাও গুরুত্ব অপরিসীম। এটা একটি দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ শক্তির মত কাজ করে। নেদারল্যান্ড, সিংগাপুর ইত্যাদি দেশগুলো সমুদ্র বন্দরকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে নেদারল্যান্ড ও সিংগাপুরের মত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কেন্দে পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

দিনে দিনে আধুনিকতা ও প্রযুক্তিতে অনেকটাই বদলে গেছে চট্টগাম সমুদ্র বন্দরের চিত্র। এই পরিবর্তনে অন্যতম বড় ভূমিকা রেখেছেন দেশের অন্যতম শিল্প উদ্যোক্তা সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন। ব্যবসা বাণিজ্যের সিংহ দুয়ার চট্টগাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকতা দেয়া ও প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তোলায় তার অবদান অসামান্য। চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশন কেন্দ্রিক ব্যবসা ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। বন্দরের বেসরকারি নিউমুরিং টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে কাজ করে তরফদার রুহুল আমিন এরই মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

সম্প্রতি গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তরফদার রুহুল আমিন বলেন,২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যখন জাপান থেকে গ্যান্ট্রি ক্রেন ক্রয় করে তখন জাপানের মিৎসুবিশি ও সুমোটোমো কোম্পানির এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান এ কোম্পানির স্থানীয় কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছিলাম। চুক্তি ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু করলে এ কাজের মেনটেইন্যান্স করব আমরা, অপারেশন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই অপারেশনও সুপারভাইজ করবে আমাদের প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের অপারেটর দিয়ে গ্যান্ট্রি ক্রেন চালানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু আধুনিক এসব গ্যান্ট্রি ক্রেন চালানোর মত অভিজ্ঞতা না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। পরে এ কাজের জন্য ওপেন টেন্ডার আহ্বান করে প্রাইভেট অপারেশনে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেক’ দুবাই পোর্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অপারেটর এনে গ্যান্ট্রি ক্রেন অপারেশন চালু করেছিলাম। এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা পরে টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করি।

এসময় তিনি বলেন, ২০০৭ সালের মার্চ মাসে যখন আমরা অপারেটর হিসেবে অপারেশন শুরু করি এর আগে যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে তখন বছরে ২ লাখ ১০ হাজার টিইউএস কনটেইনার উঠানামা হতো। আমরা দায়িত্ব নেয়ার এক বছরের মাথায় এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রথম দিকে সাড়ে ৩ লাখ থেকে পৌনে চার লাখ এবং পরে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণেরও বেশি পাঁচ লাখ টিইউএসে উন্নীত করতে সক্ষম হই। এ সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কারণে আমদানি রফতানিকারকরা তাদের পণ্য দ্রুত রফতানি ও খালাস করতে পারছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ও এর ফলে বেড়েছে। আমি বলব চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় পরিবর্তন। এক কথায় আগের ধীরগতির কাজ আর নেই। বলতে পারেন আমরা বন্দরের চেহারা বদলে দিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে কলকাতা কিংবা শ্রীলংকার বন্দরের মতো এন্ডিং বন্দর।

সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, এটা সিঙ্গাপুর বন্দরের মতো কোনো ট্রানজিট বন্দর নয়। অবকাঠামোগত কারণে এখানে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের একটি প্রধান সমুদ্রবন্দর। দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি পণ্যই এ বন্দর দিয়ে উঠানামা করে থাকে। এখানে যেসব পণ্য আসে সেগুলো আর অন্য কোনো দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট হয় না। সিঙ্গাপুর বন্দর বিশ্বের একটি ট্রান্সশিপমেন্ট হাব এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে এর সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। তবে বর্তমান সরকার জাতীয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তাছাড়া এখন বন্দরের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো।

গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তরফদার রুহুল আমিন আরো বলেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব বহুলাংশে বেড়ে গেছে যা বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

ফুটবল নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, ফুটবল বাঙালি জাতির রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। অর্থনীতিতে সর্বক্ষেত্রে যেখানে দেশ উন্নতি করছে এগিয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলায় ক্রিকেটে আমরা লাল সবুজ পতাকাকে বিশ্ব দরবারে মাথাউঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। অথচ ফুটবলে আমরা যেখানে আরো আগে এগিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু পারিনি। বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে আমাদের অবস্থান আজ সবার নিচে অর্থাৎ আমরা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। এই পিছিয়ে যাওয়া থেকে ফুটবলকে একটি ভালো অবস্থানে দাঁড় করাতে আমরা দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছি।ভবিষ্যতে ফুটবলে বিশ্ব মানচিত্রে একদিন লাল সবুজের পতাকাকে উন্নীত করব সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।