ইউরোপীয় ৩ ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড এখন ওয়ালটনের

ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড

৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় তিনটি ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড এখন ওয়ালটনের। আন্তর্জাতিক বিডিংয়ে বেশকিছু নামকরা বৈশ্বিক কোম্পানিকে হটিয়ে ব্র্যান্ডগুলোর স্বত্ব লাভ করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। ব্র্যান্ড তিনটি হলো এসিসি, জানুসি ইলেক্ট্রোমেকানিকা এবং ভার্ডিচার। ইউরোপীয় এই তিনটি ব্র্যান্ডের কম্প্রেসর, ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে ওয়ালটন।

জানা গেছে, ইউরোপের জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডগুলো সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইনভার্টার এবং ফিক্সড স্পিড কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) মেধাসম্পদ (প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সফটওয়্যার লাইসেন্স), ৫৭টি দেশে ট্রেডমার্কসহ ইটালিয়া ওয়ানবাও-এসিসি এস.আর.এল কোম্পানির কাছ থেকে ওয়ালটন স্বত্ব লাভ করেছে। এর ফলে উচ্চ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পখাতে বিশ্বজুড়ে ওয়ালটনের নতুন যুগের সূচনা হলো। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডের লক্ষ্যে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো ওয়ালটন।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজার টার্গেট করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় খুব শিগগিরই অপারেশনাল অফিস স্থাপন করবে ওয়ালটন। সেখান থেকে ওই ব্র্যান্ডগুলোর বৈশ্বিক ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিপুল জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলো দিয়ে বিশ্ববাজার দখলের লক্ষ্য ওয়ালটনের। পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রেতারাও ইউরোপীয় প্রযুক্তির ওই ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য ক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবেন।

সম্প্রতি ইতালির বোরগো ভালবেলুনা মিউনিসিপালের হেড কোয়ার্টারে এ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়। ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও গোলাম মুর্শেদ এবং এসিসি’র এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিশনার মাউরিজিও কাস্ত্রো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতালীয় সংসদ সম্পর্কিত মন্ত্রী ফেডেরিকো ডি’ইনকা, ইতালীয় সংসদের ডেপুটি দারিও বন্ড, বোরগো ভালবেলুনা পৌরসভার মেয়র স্টেফানো সেসা, ভেনেতো অঞ্চলের প্রশাসকের পরামর্শক সিলভিয়া সেস্তারো ও জিওভানি পুপ্পাতো, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া বেলুনো শিল্পসংঘের প্রেসিডেন্ট মারিয়া বার্টন, ওয়ালটন কম্প্রেসরের চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) রবিউল আলম রাজীব প্রমুখ।

সে সময় দারিও বন্ড ওয়ালটন সিইও গোলাম মুর্শেদকে ইতালীয় পার্লামেন্টারির সম্মানজনক ব্যাজ পরিয়ে দেন।

গোলাম মুর্শেদ জানান, এসিসির কাছ থেকে স্বত্ব পাওয়া ইউরোপীয় এই কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩.২ মিলিয়ন। এই প্ল্যান্টে ইনভার্টার এবং ফিক্সড স্পিড – দুই ধরনেরই কম্প্রেসর তৈরি হয়। এতে ওয়ালটনের বার্ষিক কম্প্রেসর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫ মিলিয়নে উন্নীত হবে। যা দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ জাতীয় অর্থনীতি এবং রফতানি আয়ে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে। উচ্চ-প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। যা ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। তারই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট এবং জনপ্রিয় তিনটি ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ৫৭টি দেশে ট্রেডমার্কসহ স্বত্ব নেওয়া হয়েছে।

গোলাম মুর্শেদ জানান খুব শিগগিরই এসিসি ব্র্যান্ডের ইউরোপীয়ান প্রযুক্তির নতুন ফ্রিজ, এসি এবং ওয়াশিং মেশিন নিয়ে আসতে যাচ্ছে ওয়ালটন। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার জরুরি। এসিসির যে কম্প্রেসর প্ল্যান্টের স্বত্ব আমরা নিয়েছি, সেটি হতে যাচ্ছে উপমহাদেশের প্রথম ফুল-ফ্লেজড ইনভার্টার কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট। এই প্ল্যান্টে তৈরি হবে বিশ্বের অন্যতম বিদ্যুৎসাশ্রয়ী কম্প্রেসর। যা দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

ওয়ালটন কম্প্রেসরের সিবিও রবিউল আলম রাজীব বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র কম্প্রেসর উৎপাদন প্ল্যান্ট চালু করে ওয়ালটন। এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৪তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। প্ল্যান্টটি অস্ট্রিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর অর্থ ইউরোপীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্প্রেসরের মতো হাই-টেক পণ্য তৈরিতে ইতিমধ্যেই আমরা ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এবার ইউরোপীয় তিনটি ব্র্যান্ড ও আরেকটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্প্রেসর প্ল্যান্টের স্বত্ব লাভের মাধ্যমে এ খাতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো ওয়ালটন। এই উদ্যোগ ওয়ালটনের গ্লোবাল বিজনেস সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখবে।