সব ধরনের পেমেন্ট এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে

সব ধরনের পেমেন্ট সিস্টেম কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন ২০২১’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন অনুযায়ী পেমেন্ট তথা পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী, পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী ও পরিশোধ সেবাদানকারীর কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যদি অবসায়ন ঘটে তাহলে দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে আইনে গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।

তিনি বলেন, ব্যাংকে যেসব পেমেন্ট এবং সেটেলমেন্ট হচ্ছে, সেখানে কোনো আইন ছিল না। কিছু রেগুলেশন দিয়ে পরিচালিত হতো। বর্তমান অবস্থায় ডিজিটাল লেনদেন হওয়ার কারণে এ আইন নিয়ে আসা হয়েছে। খসড়া আইনে ৪৭টি ধারা রয়েছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা এ আইনে যুক্ত করা হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এ আইনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্রিপ্টোকারেন্সি ইজ নট আ কারেন্সি। ওটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদিত কোনো ট্রানজেকশন না। ডিজিটাল ব্যাংকিং ডাজ নট মিন ক্রিপ্টোকারেন্সি, এটা খেয়াল রাখতে হবে।

আইনটি প্রণয়নে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আইনের মাধ্যমে দেশে কার্যরত সব পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী, নিকাশ ও নিষ্পত্তিকরণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশে কার্যরত স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম এ আইনের বাইরে থাকবে।

জানা গেছে, বর্তমানে অনেক ধরনের লেনদেন হচ্ছে—মূল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ বিকাশ, নগদ, রকেট, বিভিন্ন ব্যাংকের ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, ইলেকট্রনিকভাবে তহবিল স্থানান্তর, চেক ইলেকট্রনিকভাবে উপস্থাপন, ডিজিটাল মুদ্রা, ট্যাংকেটেড চেক, ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ, অর্থ গ্রহণ ও গ্রাহকের অর্থ চাহিদা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আর এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট। এদের কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো এবং গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে এ আইন গ্রণয়ন করা হচ্ছে।

এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের অধীনে তৈরি করা রেগুলেশন দ্বারা দেশের পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো। রেগুলেশনের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার ও দণ্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন প্রণয়নের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নতুন নতুন পেমেন্ট সেবা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইনের খসড়া তৈরি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও দীর্ঘ পর্যালোচনাশেষে পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আইনের খসড়ায় বলা হয়, মূল ব্যাংকিং সেবার বাইরে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসায় আগ্রহী ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদানের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক অনুমোদন নিতে হবে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’-এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণে, হারে ও পন্থায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।