কিছুতেই কমছে না নিত্যপণ্যের দাম

নিত্যপণ্যের দাম

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে প্রথমে ব্যবসায়ীদের কারসাজি, পরে তাদের সঙ্গেই আলোচনায় বসে দাম নির্ধারণ। এ ছাড়া নিয়মিতই চলছে বাজারে অভিযান, জরিমানা। এরপরও কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। প্রথম দফায় দাম নির্ধারণে আপত্তি থাকায় দ্বিতীয় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হয় আলুর দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সব কিছুই করেছে সরকার। তবু আলুর নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হয়নি। খুচরা বাজারে এখনো পণ্যটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। চড়া সবজির দামও।

এর আগে সবজি বিক্রেতারা বলেছিলেন বাজারে শীতের সবজি এলে দাম কমবে। কিন্তু সুর পাল্টে এখন তারা বলছেন, এবার বন্যায় অনেক ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় শীতের সবজি বাজারে কম আসবে। সুতরাং সবজির দাম সহসাই কমছে না। এ ছাড়া বাজারে পিয়াজ, চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই চড়া। কোনো কিছুতেই যেন কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।

গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। তবে কাওরান বাজারে পাইকারি দরে ৩০ এবং খুচরায় ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অন্য সব খুচরা বাজারে পণ্যটি আগের চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ, মগবাজার, শান্তিনগর, হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে বাজারের এমন চিত্র দেখা গেছে।

এর আগে গত ২০শে অক্টোবর সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে আলুর দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে কেজিপ্রতি দর পাইকারিতে ৩০ টাকা ও  হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকা, খুচরায় ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর আগে ৭ই অক্টোবর খুচরায় সর্বোচ্চ দর ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তাতে আপত্তি ছিল ব্যবসায়ীদের। দ্বিতীয় দফা দাম নির্ধারণকালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দু’দিন পর থেকে বাজারে কম দামের আলু পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একই আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে বাজারে কম দামে আলু পাওয়া যাবে। তবে গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে কেজিপ্রতি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কাওরান বাজারের আড়তে পাইকারি মূল্য নেয়া হলেও পাশেই খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। তবে কয়েকদিন আগেই খুচরা বাজারে আলুর কেজিপ্রতি দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সে হিসাবে এখন দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কেজিপ্রতি আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা। যদিও এ দর বাজারে কোথাও দেখা যায়নি।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে তুলনামূলক কম। কারণ এবার বন্যার কারণে অনেক জমি নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে সরবারহ খুব বেশি নাও বাড়তে পারে। আর সরবারহ না বাড়লে দামও খুব একটা কমবে না।
ওদিকে বাজারে এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর চীন ও মিশর থেকে আমদানি করা পিয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং পাকিস্তানি পিয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে সবজির দাম এখনো চড়া। বিভিন্ন ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে ভোজ্য তেল এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও কোম্পানিগুলো মিলগেটে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা কমিয়ে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলো। তবে বাজারে তেলের দাম আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২২শে অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মিলগেটে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা কমিয়ে বিক্রি করবে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো।

আরো পড়ুন- আবারও বিশ্বসেরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে শান্তিবাগের বাসিন্দা রিপন জানান, বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রে দাম শুনলে মাথা ঘুরে। আগে ১০০-১৫০ টাকার সবজি কিনলে দুই দিন আরামে চলে যেতো। আর এখন একটা সবজির দামই ১০০ টাকা। বাজারে যেটার চাহিদা যেমন সেটার দামও তেমন চড়া। এটাতো কোনো সিস্টেম হতে পারে না। কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি থাকলে দাম বাড়তে পারে। কিন্তু সরবরাহে ঘাটতি নেই অথচ চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। সবজির ঘাটতির ফলে দাম বাড়ছে, সেজন্য মানুষ আলু বেশি করে কিনছিল। যখন ব্যবসায়ীরা দেখলো মানুষ আলু বেশি কিনছে ঠিক তখনই তারা কারসাজি করে দাম বাড়ালো। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও কমানো হয়নি। তাদের শক্তির উৎস কোথায়? তারা তো সরকারের নির্দেশ অমান্য করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন? তারা ইচ্ছেমতো সবকিছুর দাম বাড়ায়। সরকারের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় বাজারে এমন অস্থিরতা বলে মনে করেন তিনি।