চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। আগামী পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রামের নগরপিতা হচ্ছেন তিনি।
মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
বুধবার রাত ১ঃ৩০ এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
নগরীতে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। তবে, দুপুরে ইভিএম ভাঙচুর ও কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি হলে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
এদিকে চসিক নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। অর্থাৎ ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বাকি ৩২৫টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
এদিকে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত সার্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয়েছে। কাউন্সিলরের বিরোধে সকালে পাহাড়তলী নয়াবাজারে একজন এবং বিকেলে আমবাগানে একজন নিহত হন। এছাড়া, আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপির এক প্রার্থীকে গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তর পাহাড়তলী ৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জহুরুল ইসলাম জসিমকে বিকেলে আটক করে পুলিশ। পাথরঘাটা ওয়ার্ডে কয়েকটি কেন্দ্রে মারামারি ও কেন্দ্রে ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাঈল বালীকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আটক করা হয়।
জানা যায়, নির্বাচনে মোট ২৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন। মেয়র পদে ৭ প্রার্থী হলেন : নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, মিনার প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী।
আরো পড়ুন- চট্টগ্রাম নির্বাচনে ২ প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলি, নিহত ১
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একই বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ জুলাই পুনরায় চসিক নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এ সময়ে চসিকের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হলে নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে।