হিজাব ব্যবহারে কোন দেশে কত জরিমানা ?

মুসলিম মহিলাদের হিজাব নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতর্ক নতুন নয়। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষার মাধ্যম হিসেবে মুসলিম বিশ্বে এই পোশাকটির রয়েছে বিশেষ আবেদন।

ইউরোপের অনেক দেশেই হিজাব নিষিদ্ধের পাশাপাশি এর জন্য জরিমানাও দিতে হয়। মুসলিম নারীদের বিশেষ পছন্দের পোশাক হিজাব। একই সঙ্গে এটি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতারও প্রতীক। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসার পাওয়া সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে হিজাব পরিহিত নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

মুসলমানদের ছাড়িয়ে অনেক অমুসলিমকেও হিজাব আকর্ষিত করেছে । কিন্তু নিরাপত্তা বা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন মুসলিমরা।

এবার জেনে নেয়া যাক বিশ্বের কোন দেশে হিজাব পড়ার জরিমানা কেমন।

ফ্রান্স

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে ফ্রান্স প্রথম বোরকা ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরাসি এমপিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই আইন পাশ হয়ে যায়। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়।

দেশটিতে ১৯৯০এর শেষ নাগাদ মুসলিমদের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। মুসলিমদের পোশাক পরিচ্ছদ বা যা দিয়ে বাইরে থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে চিহ্ণিত করা যায়, তার প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেতে থাকে।

ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস। বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

বেলজিয়াম

বেলজিয়ামে ২০১১ সালের একটি আইন পাস করে বলা হয়েছিল যে উন্মুক্ত স্থানে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা ব্যক্তির চেহারাকে আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে রাখে। তবে স্বাস্থ্যগত কোনো কারণ থাকলে তা ভিন্ন কথা।

এই আইন লংঘন করলে ১৫ থেকে ২০ ইউরো জরিমানা। পাশাপাশি রয়েছে ৭ দিনের জেল।

সুইজারল্যান্ড

দ্বিতীয় দেশ হিসাবে আছে সুইজারল্যান্ড। দেশটিতে ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানে মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ। এই নিয়মটি রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও প্রশাসনিক অধিদপ্তরগুলোর পাশাপাশি গণপরিবহন ও পৌরসভা ভবনগুলোতে প্রযোজ্য।

২০১৪ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত কর্তৃক অনুমোদিত এই আইনটি লঙ্ঘন করলে দেশটির হিসেবে দেড়শ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

ইতালি

ইতালির দুটি অঞ্চল লোম্বার্ডি এবং ভেনেটোকে হাসপাতাল ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে পুরো মুখের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়গুলো নিকাব নিষিদ্ধ করেছে যদি এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী হয় বা এটি পরীক্ষার হলে বা কোনো ক্রীড়া ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে অথবা এটি যদি এটি স্বাস্থ্যবিধি বিধি লঙ্ঘন করে। অন্যথায় হিজাব পড়ার সর্বত্র অনুমোদন রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়াতে ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর উন্মুক্ত স্থানে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে দেড়শ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা আরোপিত হয়েছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার সাংবিধানিক আদালত ২০২০ সালের শেষের দিকে এমন একটি আইনকে প্রত্যাবর্তন করেছে যেটি পাস হয়েছিল ২০১৯ সালে এবং যে আইনটি নার্সারী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদেরকে হিজাব পড়তে বাধা প্রদান করেছিল।

বুলগেরিয়া

বুলগেরিয়ায় ২০১৬ সালের একটি আইন পাস করে বলা হয়েছিল যে উন্মুক্ত স্থানে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা ব্যক্তির চেহারাকে আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে রাখে। এই আইন লংঘন করলে দুইশ লিভা তথা প্রায় একশত দুই ইউরো পরিমাণ জরিমানা।

ডেনমার্ক

ডেনমার্কেও রয়েছে উন্মুক্ত স্থানে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ২০১৮ সালের আগস্টে করা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জন্য রাখা হয়েছে এক হাজার ক্রোনার জরিমানা। যা প্রায় ১৩০ ইউরো পরিমাণ। বারবার আইন লংঘন করলে এটি পৌঁছে যেতে পারে ১০ হাজার ক্রোনার পর্যন্ত।

জার্মানি

অন্যদিকে জার্মানিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ না হলেও রয়েছে কাছাকাছি আইন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানিতে রয়েছে একেক রাজ্যে একেক নিয়ম। কোনো রাজ্যে হিজাবকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আবার কোনো রাজ্যে বৈধ।

সেখানে উন্মুক্ত স্থানে হিজাব পড়তে কোনো বাধা না থাকলেও তদন্তের সময় মুখ খুলতে বাধ্য করা হয় মুসলিম নারীদেরকে।

২০১৭ সালে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত ওই দেশের নারী শিক্ষকদের উপরে হিজাব সংক্রান্ত একটি নিয়মকে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এর সুন্দরভাবে পরিচালনার স্বার্থে করা হয়েছে মত দিয়েছে।

নেদারল্যান্ড

নেদারল্যান্ডে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনটি কার্যকর হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট।

এই আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে একসঙ্গে দেড়শ ইউরো জরিমানা।

নরওয়ে

নরওয়েতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে একই রকমের নিয়ম। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এই নিয়মটি চালু হয়।