বিনা কারণে রোজা না রাখার শাস্তি

রোজা না রাখার শাস্তি

শায়খ মো: সাইফুল্লাহ : রমজান আল্লাহ প্রদত্ত একটি ফরজ বিধান। নির্দিষ্ট সময়ে রমজান পালন করার নির্দেশ দিয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। ব্যক্তি বিশেষের অবস্থা, পরিবেশ ও শর্তানুযায়ী রোজা পালনের বিভিন্ন বিধান আরোপিত আছে। তবে শরয়ী সম্মত কোন কারণ ছাড়া রোজা পালন না করা মারাত্মক ইসলাম বিরোধী কাজ। কারন রমজান একটি ফরজ ইবাদত এবং ইসলামী শরীয়ার অন্যতম রুকন। এটিকে অবহেলা করা, হেলায়-খেলায় কাটিয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

বিনা ওযরে রমজানের রোজা ত্যাগকারীর ক্ষেত্রে দু’টি কারণ উল্লেখ করা যায়- ১. হয় সে তা ফরজ বলে অস্বীকার করছে এবং তাকে একটি ইবাদত বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ২. আর না হয় সে আলসেমি করে তা রাখছে না। সুতরাং যদি কেউ রোজা ফরয বলে অস্বীকার করে এবং বলে যে, রোজা শরীয়তে ফরজ নয়, তাহলে সে কাফের ও মুরতাদ। কারণ, সে দ্বীনের সর্ববাদিসম্মত এমন একটি ব্যাপারকে অস্বীকার করে যা আম-খাস সকলের পক্ষে জানা সহজ এবং যা ইসলামের একটি রুকন।

আর মুরতাদ হওয়ার ফলে একজন মুরতাদের মাল ও পরিবারের ব্যাপারে যে বিধান আছে তা তার উপর কার্যকর হবে। সরকারের (ইসলামী রাষ্ট্রে) কাছে সে হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে গন্য হবে। তার গোসল-কাফন ও জানাযা হবে না এবং মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করাও যাবে না। অবশ্য যদি কেউ নওমুসলিম হওয়ার ফলে অথবা ইসলামী পরিবেশ ও উলামা থেকে দূরে থাকার ফলে এ ধরনের কথা বলে থাকে, তাহলে তার কথা ভিন্ন। পক্ষান্তরে যদি কেউ আলসেমি করে রোজা না রাখে, তাহলে ভয়ানক কঠিন শাস্তি তার জন্য অপেক্ষা করছে।

হযরত আবু উমামাহ বাহেলী কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন যে, “একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম; এমন সময় স্বপ্নে আমার নিকট দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমাকে এক পাহাড়ের চ‚ড়ায় নিয়ে গেলেন….., তখন আমি বেশ কিছু চিৎকার ধ্বনি শুনতে পেলাম। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির উপর বাঁধা অবস্থায় লটকানো আছে, তাদের কশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্ত ঝরছে। নবী সা. বলেন, ‘আমি বললাম, ওরা কারা? তাঁরা বললেন, ওরা হল তারা, যারা সময় হওয়ার আগে ইফতার করে নিত (বায়হাকী৪/২১৬)।

মুস্তাফা মুহাম্মদ আম্মারাহ তাঁর তারগীবের টিকায় বলেন, ‘উক্ত হাদিসের ভাবার্থ এই যে, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবিকে রোজা ভঙ্গকারীদের আযাব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল করেছেন। তিনি দেখেছেন, তাদের সেই দুরাবস্থা; তাদের আকার-আকৃতি ছিল বড় মর্মান্তিক ও নিকৃষ্ট। কঠিন যন্ত্রণায় তারা কুকুর ও নেকড়ের মত চিৎকার করছে। তারা সাহায্য প্রার্থনা করছে অথচ কোন সাহায্যকারী নেই। তাদের পায়ের গোড়ালির উপর জাহান্নামের আঁকুশি দিয়ে কসাইখানার জবাই করা ছাগলের মত তাদেরকে নিন্মমুখী করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের কশ বেয়ে মুখ ভর্তি রক্ত ঝরছে!

ইমাম যাহাবী বলেন, ‘মুমিনদের নিকটে এ কথা স্থির- সিদ্ধান্ত যে, যে ব্যক্তি কোন রোগ ও ওযর না থাকা সত্তে¡ও রমজানের রোজা ত্যাগ করে, সে ব্যক্তি একজন ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী থেকেও নিকৃষ্ট। বরং মুসলিমরা তার ইসলামে সন্দেহ পোষণ করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন নাস্তিক ও নৈতিক শৈথিল্যপূর্ণ মানুষ (ফিকহুস সুন্নাহ-১/৩৮৪)।

রোজা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। ভেঙ্গে ফেলা রোজার বিনিময় কোনভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। একটি রোজার পরিবর্তে সারা জীবন রোজা আদায় করলেও যথেষ্ট হবে না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও রোগ ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের রোজা দ্বারাও এই কাযা আদায় হবে না, যদিও সে সারা জীবন রোজা পালন করে (বুখারি-১৮১১)।

কাজেই শরয়ী কারণ ছাড়া রোজা ভাঙ্গা কবীরা গুনাহ। মুসলমানদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন ও আল্লাহমুখী হতে হবে। তা নচেৎ রোজা না রাখার ভয়াবহ আযাব তাদের উপর আপতিত হবে। এবং রোজা না রাখার ফলে সমাজে যে অন্যায় সংঘটিত হয় এবং প্রকাশ্যে খানা-পিনার যে অনৈতিক আড্ডা জমে ওঠে এজন্য তাদেরকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

লেখক- এমফিল গবেষক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট
‎‎