ফেরেশতাদের দু’আ পাওয়ার সহজ আমল

ফেরেশতাদের দু'আ

ব্যাপারটা কেমন হয় যদি ফেরেশতাগণ আপনার জন্য দু’আ করতে থাকে? কেমন লাগবে আপনার কাছে, যদি তাঁরা আপনার জন্য মাগফেরাত বা ক্ষমা এবং আপনার কল্যাণের দু’আ করতে থাকে। ব্যাপারটা কিন্তু অসাধারণ হয় তাই না? চলুন তাহলে আজকে কিছুক্ষণ কুরআন হাদিসের আলোকে ঐসব ‘আমল’ নামক মনিমুক্তো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি যার বিনিময়ে আমাদের জন্য ফেরেশতাগণও দু’আ করতে থাকবেন।

আগে একটু মালাইকা বা ফেরেশতাগণ সম্পর্কে জেনে নেই। ফেরেশতাগণ আল্লাহ’র প্রতিটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মান্য করেন। তাদের মাঝে অবাধ্য হওয়ার যোগ্যতা নেই। আল্লাহ তাদেরকে যে আদেশই করেন; তাঁরা সেটাকে পালন করেন। তাঁরা আল্লাহর নাফরমানি করে না কখনো। আদের এই গুণের কথা আল্লাহ নিজে বর্ণনা করেছেন আল কুরআনে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আল্লাহ তাদেরকে যা আদেশ করেন, তাঁরা তা অমান্য করে না এবং তাঁরা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই করে।” [সূরা আত-তাহরীম- ৬]

আল্লাহ’র এই প্রিয় দাসদের দু’আ যদি অনুক্ষণ আমরা পেতে চাই, তাহলে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি আমল আমাদের করতে হবে। কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখি কী সেই আমলগুলো যার কারণে ফেরেশতাগণও আমাদের জন্য দু’আ করবে।

ফেরেশতাগণের দু’আ পাওয়ার সহজ একটি আমল হলো, অযু করে ঘুমানো। হ্যাঁ। কাজটা অতি সাধারণ মনে হলেও এর ফযিলত কিন্তু পিলে চমকানোর মতো। কি বিশ্বাস হলো না তো। ঠিক আছে তাহলে, আপনিই পড়ে নিন রাসূল সা. এ ব্যাপারে কী বলেছেন। দু’টো ঝলক আছে যা ভিন্ন দু’টি হাদিসের মধ্যে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন,

“যদি কোন বান্দা অযু অবস্থায় ঘুমান, তাহলে তার পোশাকের মধ্যে একজন ফেরেশতা শুয়ে থাকেন। রাত্রে যখনই এই ব্যক্তি নড়াচড়া করে তখনই এই ফেরেশতা বলেলঃ ‘হে আল্লাহ আপনি এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ সে অযু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।”  [সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/৩২৮]

আরেকটি ফযিলত হলো, রাসূল ﷺ বলেন,

“কোন মুসলিম যদি অযু করে ঘুমায়; এরপর রাত্রে কোন সময় হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে  (ঐ অবস্থায় শুয়ে) আল্লাহর কাছে তাঁর জাগতিত বা পারলৌকিক কোনো কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তাঁকে তাঁর পার্থিত বস্তু দিবনই।” [নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৬/২০২]

কি বিশ্বাস হলো তো এবার? এবার আসুন আর কী কী আমল আছে তা দেখে নিই।

আরেকটি আমল হলো রোগী দেখতে যাওয়া। এই কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে জাগতিকভাবে যেমন রোগী এবং তার আত্মীয়দের সাথে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়, পাশাপাশি পারলৌকিকভাবে আমরা আল্লাহর করুণার পাত্র হতে পারি। আর মজার বিষয় এবার কিন্তু একজন দু’জন ফেরেশতা আপনার জন্য দু’আ করবে না। পুরো ৭০ হাজার বিশিষ্ট ফেরেশতাদের একটি দল শুধু আপনার জন্য দু’আ করতে থাকবে। সত্তর হাজার! চিন্তা করতে পারেন? তাও আবার সকাল সন্ধ্যা! রাসূলে কারীম ﷺ বলেন-

“কোন মুসলিম যদি অন্যকোন মুসলিমকে সকালে দেখতে যায়, তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’আ করতে থাকে। আর সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তাহলে ভোর পর্যন্ত তাঁর জন্য দু’আ করতে থাকে। এবং জান্নাতে তার জন্য একটা ফলের বাগান তৈরী হয়।” [জামে তিরমিযি- ৯৬৯]

আরো একটি আমলের কথা শুনুন, সেটি রাসূলের ﷺ  প্রতি দরূদ।

আল্লাহ’র সবচেয়ে প্রিয় পাত্র হলেন, আমাদের কলিজার টুকরো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তা’আলা তাঁকেএতটাই ভালবাসেন যে, স্বয়ং তিনি নিজে তাঁর প্রতি সালাত-সালাম প্রেরণ করেছেন। সাথে সাথে দরূদ প্রেরণের নির্দেশও দিয়েছেন মু’মীনদের। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি সালাত (প্রসংসা) করেন এবং ফেরেশতারাও তাঁর জন্য দরূদ পাঠ করে। হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো” [আল আহযাব-৫৬]

দরূদ পাঠ করলে আমরা আল্লাহর আদেশ পালনের কারণে একদিকে ইবাদতের সাওয়াব; পাশাপাশি যে লাভটা আমাদের হবে, তা হলো আমরা ফেরেশতাদের দু’আ পাবো। কারণ ইবনে মাজাহ’র এই হাদিসটি।

রাসূল ﷺ  বলেন,

“কোন মুসলিম যতক্ষণ আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দু’আ করতে থাকে। সুতরাং বান্দা চাইলে তার পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ ৯০৭]

সবশেষে সালাতে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর গুরুত্ব আলোচনা করে আজকের লেখা শেষ করবো। সালাতের মধ্যে প্রথম কাতার খুবই ইম্পর্টেন্ট। আল্লাহর কাছে এটা ভিআইপি কাতার। আল্লাহ নিজে এই কাতারের মুসল্লিদের জন্য সালাত (অনুগ্রহ) করেন। আর ফেরেশতাগণও এদের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করে। রাসূল ﷺ  বলেন-

“আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা (দু’আ) করেন” (নাসায়ী-৮১১)

কি বিশাল ব্যাপার তাই না! এগুলো ছাড়াও আপনি যদি আপনার কোন মুসলিম ভাই কিংবা বন্ধু কল্যাণের জন্য দু’আ করেন। হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী ফেরেশতাগণও আপনার জন্য অনুরূপ দু’আ করতে থাকবে। তাই আমলগুলো অতি সহজ হলেও এর ফল কিন্তু মোটেও কম নয়। চলুন তবে দেরী না করে ছোট্ট এই আমলগুলোকে বানিয়ে নিই নিজের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর লুফে নিই ফেরেশতাদের দু’আ পাওয়ার এই অফারগুলো। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : শরীফুল ইসলাম সজীব, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়