পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমূল্যে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। শেষ এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও মাত্র কয়েকমাস আগেই পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়েছে। বাজারে এখনো দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। যে কারণে এখন সাধারণ মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন- মৌসুমের শেষে এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে?
তবে এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছেই। বাংলাদেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটছে। ২০১৯ সালে ঘাটতি দেখা দিলে কার্গো বিমানে জরুরিভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। তবে ওই সময়ও সেসব পদক্ষেপে খুব বেশি সুফল আসেনি। আড়াইশো টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে খেয়েছে মানুষ।
পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, ভারত থেকে আমদানি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ বা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কোনো পদক্ষেপ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা জাগো নিউজকে বলেন, এখনো কিছু চূড়ান্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানো যায় সে পথ খুঁজছে। আমরা আলোচনার মধ্যে আছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
পেঁয়াজের মৌসুম শেষে দামে অস্থির পরিস্থিতি ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই হয়ে আসছে। এর আগে অস্থিরতা দেখা দিতো মৌসুমের শেষ ভাগে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। এ বছর সে সময় আরও আগেভাগে এসেছে, যখন নতুন মৌসুমের এখনো সাত মাস বাকি। এ বছর ওই সময় পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সাধারণ ভোক্তাদের কাছে এটিই এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়।
এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়।
আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভারত থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করা হতো। এবার ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। যে কারণে সে দেশেও পেঁয়াজের দাম বেশি। বছরের শুরু থেকেই উৎপাদন কম হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রথমে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে গত মে মাসে আমদানির অনুমতি দিলেও শুল্ক বাড়িয়ে দেয়।
ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) এখন টনপ্রতি ৫৫০ মার্কিন ডলার। যা আমদানি করতে আরও প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ টাকা। যে কারণে এখন খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।
দেশের কৃষকদের ঘরেও এবার পেঁয়াজের মজুত একেবারে কম। কারণ, দেশের বাজারে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল। সাধারণত প্রতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূল মৌসুমের পেঁয়াজ বা হালি পেঁয়াজ তোলেন কৃষক। এ বছর ওই সময়ও পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। যে কারণে দাম বেশি থাকায় আগেভাগেই উত্তোলন করে বিক্রি করেছিলেন চাষিরা। এতে তারা লাভবান হলেও সার্বিকভাবে দেশের মোট উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এখন পেঁয়াজের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মজুতদারদের হাতে।
এদিকে, ওই সময় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। যে কোনো সময় সেটি প্রত্যাহার হলে দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কায়ও অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বাজার তথ্য বলছে, গত মার্চ-এপ্রিলে পেঁয়াজের দাম ছিল যে কোনো বছরের ভরা মৌসুমের চেয়ে বেশি।