গ্রিন জুসের উপকারীতা

মারুফা ইয়াসমিন তনু : সুস্থ কর্মব্যস্ত দীর্ঘজীবনের জন্যে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমানে সবুজ শাকসবজি। কারণ পুষ্টিগুণের ভরপুর ঘন সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজিতে রয়েছে বিটা
ক্যারোটিন, ল্যুটিন এবং জিয়াক্স্যানথিনের মতো ফাইটোকেমিকেলস। যা কিনা আমাদের
দেহকোষকে সুরক্ষা দেয় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এগুলোতে থাকা ক্লোরোফিল রক্তকে অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে থাকা ফলিক এসিড হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে থাকে। ভিটামিন ই
এবং সি ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ ও আকর্ষণীয় করে তুলে। বিশ্বের সেরা খাদ্য তালিকার মধ্যে গ্রীন
জুস এর অবস্থান দ্বিতীয়।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে বাদাম, এরপর এ রয়েছে গ্রিন জুস। এই জুস রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে, শরীর ও লিভারকে দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।

গ্রিন জুস

গ্রিন জুস পরিচিত পানীয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানীয় মধ্যে রয়েছে এই গ্রিন জুস। সুস্থ কর্মব্যস্ত দীর্ঘজীবনের জন্য এখন অনেকেই গ্রীন জুস কে রাখছেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের, বিশেষত হার্ট ও ডায়বেটিসের রোগীদের এখন ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন গ্রিন জুস পানের। সুস্থ-সবল মানুষেরাও এই জুস পান করে হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন, লাভ করতে পারেন স্বাভাবিক ও সুস্থজীবন।

যা লাগবে গ্রিন জুস তৈরিতে

ঘরে বসে খুব সহজেই বানাতে পারেন গ্রিন জুস। এ জন্য লাগবে- ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, পালং শাক, কেল পাতা , করলা , শসা , গাজর , বিট রুট ,বাঁধা কপি, লাউ আদা ও লেবু। উপরের উপাদানগুলো সংমিশ্রনে জুস করে প্রতি গ্লাস-এ আপেল সিডার ভিনেগার ( ২ (টেবিল চামচ), নারিকেল তেল ( ২ টেবিল চামচ) ও অলিভ ওয়েল তেল (১ টেবিল চামচ)।

গ্রিন জুস পানে যে উপকার

– এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
– ভিটামিন এ, কে, সি এবং আয়রনের দারুণ উৎস এই জুস এনার্জি বুস্ট করে। ফলে বাড়ে
সতেজতা ও প্রাণবন্ততা।
– রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। শরীর ও লিভারকে দুষিত থেকে রক্ষা করে ও লোহিত
রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
– হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং সব ধরনের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
– অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধমৃ বলে অন্যান্য রোগব্যাধি কমাতেও সাহায্য করে।
– বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে।
– ত্বকের লাবণ্যভাব বৃদ্ধিবৃ করে।
-এই উপকারী রস হজমতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং
-শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পানীয় এটি।

গ্রিন জুস কতটুকু খাওয়া উচিত

আপনি দিনে ২ বার খেতে পারবেন ২-৪ গ্লাস পরিমান ।

কখন খাবেন?

দুপুর ১২ টার পর থেকে অল্প অল্প করে বিকেল পর্যন্ত খেতে পারবেন । গ্রিন জুস ব্লেন্ড করার পর সাথে সাথে খাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। একবার বানিয়ে ফ্রিজে রেখে অনেকদিন খাওয়ার চেয়ে ভালো হয় যদি বানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খান। এই অসাধারণ পুষ্টিদায়ক পানীয় থেকে এত চমৎকার উপকার আপনি পাবেন, যার জন্যে প্রতিদিন একটু সময় আলাদা করে রাখালেই সম্ভব।

এটি জুস করে কেন খেতে হবে সালাদ করে খেতে পারিনা ?

গবেষণায় দেখা গেছে যে আমরা যখন কোন কাঁচা শাক – সবজি কে তাপমাত্রা দেয়া হয় এবং সেটি ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার উপরে হয়ে যায় তখন বায়ো ইলেক্ট্রিকাল শক্তির এনজাইম এবং জীবনীশক্তি ব্যাপারগুলা আছে, সেগুলো হয়ে যায়।

পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেলস এর পরিমান অনেকটা কমে আসে । এ জন্য সবুজ পাতাযুক্ত বা কাঁচা সবজি গুলো ভিতরে এক ধরনের প্রান শক্তি বিদ্যমান থাকে যেটা থেকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ,মিনারেলস, বায়ো ইলেক্ট্রিকাল শক্তি শোষণ করতে পারে এবং আমাদের যে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ আছে সেগুলোকে রিজেনারেট হয়ে নতুন কোষ তৈরি হয় সেটি পুষ্টিগুন সম্পন্ন ও রোগমুক্ত কোষ , যার কারনে খুব সহজে রোগমুক্ত থাকতে পারি।

এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ গ্রীন জুসজু দুই বেলা করে পান করা । এছাড়া আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমনঃ হার্ট ডিজিস, লিভার ডিজিস, কিডনি ডিজিস এই ধরনের সমস্যাগুলো হয়ে থাকে, তারা যদি নিয়মিত গ্রীন জুস খায়, তারা এই সকল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে ।

লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার