বিমানবন্দরে ডলার কারসাজি : সাত ব্যাংকের বিরুদ্ধে দূদকের মামলা

ডলার কারসাজি

বিমানবন্দরে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ডলার কারসাজির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে বিদেশি মুদ্রা অবৈধ ক্রয় বিক্রয় ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত চারটি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (৫ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) এই অভিযান পরিচালনা করেছিল দূদকের একটি টিম। ওই সময়ে বিমানবন্দরে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া আটটি ব্যাংকের বুথ ও কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ অভিযান চালিয়েছিল। একই সময়ে সরকারি রূপালী ব্যাংকের বুথেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিলো। তবে ডলার কারসাজি বা বিদেশি মুদ্রা অবৈধ ক্রয় বিক্রয় ও অর্থ পাচারের সাথে প্রতিষ্ঠনটির কোন সংশ্লিষ্টতা পায়নি দূদক টিম।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত অভিযানে প্রাথমিকভাবে চারটি ব্যাংক ও দুটি মানি এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। ফলে আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (২৭ মার্চ) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ কমিশনের উপ পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ডলার পাচারের সাথে জড়িতে প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরে রূপালী ব্যাংকের বুথেও অভিযান পরিচালতি হয়েছে। তবে এতে ব্যাংকটির কোন সম্পৃক্ততা পায়নি। দূদকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে রূপালী ব্যাংক যেভাবে সকল নিয়মকানুন পরিপালন করে ব্যাংকিং করে অন্য ব্যাংকগুলো যদি সেটা করতো তাহলে অর্থ পাচার অনেকাংশে কমে যেত।

মামলার আসামিরা হলেন- রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সিনিয়র প্রন্সিপাল অফিসার ও বুথ ইনচার্জ আনোয়ার পারভেজ, প্রিন্সিপাল অফিসার শামীম আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান, সিনিয়র অফিসার মো. সুরুজ জামাল, অমিত চন্দ্র দে, মো. মানিক মিয়া, সাদিক ইকবাল, মো. সুজন আলী ও মো. হুমায়ুন কবির।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম ভূইয়া (ক্যাশ), মো. কামরুল ইসলাম (ক্যাশ), একই ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সোহরাব উদ্দিন খান, খান আশিকুর রহমান, এবিএম সাজ্জাদ হায়দার (ক্যাশ), সামিউল ইসলাম খান, অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. আব্দুর রাজ্জাককে আসামি করা হয়।

এ ছাড়া বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের অফিসার মো. আবু তারেক প্রধান, ব্যাংকটির সাপোর্টিং স্টাফ মো. মোশাররফ হোসেন, এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জারের কাস্টমাস সার্ভিস ম্যানেজার মো. আসাদুল হোসেন ও ইম্পেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক কে এম কবির আহমেদকে আসামি করা হয়।

দুদক সচিব বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা অবৈধভাবে বিদেশ হতে আসা প্রবাসীদের থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের মুদ্রা সরবরাহ করেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এ অনিয়মে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্রয় করা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার এবং অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন জড়িত ব্যক্তিরা। পরে কালোবাজারি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের সরবরাহ করেন তারা।

এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারি নিয়ম কানুন মেনে ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে আসছে রূপালী ব্যাংক। আমরা সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছি সরকারের সুনাম নষ্ট হয় বা দেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজের সাথে জড়ানো যাবে না। সবাই সবার জায়গা থেকে সচেতন হলে রূপালী ব্যাংক আর্থিক খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে। সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে আমরা এই সুনামটি আর্জন করতে চাই।