আজ থেকে শুরু অমর একুশে গ্রন্থমেলা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুরু। রক্তস্নাত একুশের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছিলাম বাংলায় বলা ও লেখার অধিকার। মাতৃভাষার চেতনাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯।

বইকে ঘিরে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মাসব্যাপী মিলনমেলা বসছে বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এদিন বিকাল ৩টায় গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথি হিসেবে তার পাশে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিসরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। আল-আরিশি ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ শীর্ষক গ্রন্থের লেখক। গ্রন্থটির অনুবাদ প্রকাশ করছে বাংলা একাডেমি। লেখকের উপস্থিতিতে বইটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হবে।

এদিকে অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

মেলা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, একাডেমির সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস, গ্রন্থমেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন ও মেলার পৃষ্ঠপোষক বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রন্থমেলার নতুন লোগো উপস্থাপন করেন মেলার স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে, যা গতবারের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট বেশি।

মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণটির নামকরণ করা হয়েছে ভাষাশহীদ বরকতের নামে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণকে চারটি চত্বরে ভাগ করে উৎসর্গ করা হয়েছে ভাষাশহীদ সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে।

পাঁচ ভাষাশহীদের নামে উৎসর্গকৃত এবারের মেলার দুই প্রাঙ্গণের প্রতিটি চত্বরের সাজসজ্জায় থাকবে পৃথক রঙের ব্যবহার।

তিনি জানান, একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রকাশনা সংস্থাকে ৬২০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে।

অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান পৃথক স্টল পেয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের স্টলে।

গ্রন্থমেলায় টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিক দিয়ে দুটো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ৬টি পথ থাকবে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থা।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় নানা বিষয়ে গুণীজনদের নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রদান করা হবে সমাপনী দিনে।

জালাল আহমেদ বলেন, এবার প্রথমবারের মতো ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যাতে প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক নিজেদের বই নিয়ে পাঠকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।

একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বিজয় : বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)’।

সেই সঙ্গে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হবে এ মেলা থেকে।

গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।