সামনে ঈদ। প্রিয়জনদের সঙ্গে এই ঈদের আনন্দে যোগ দিতে রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০ লক্ষাধিক মানুষ ছুটে যাবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সড়কপথে যানজটে ভোগান্তি, ট্রেনে স্থানসংকুলানের অভাব ও লঞ্চযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের আগ্রহ বাড়ছে আকাশপথে। তাই টিকিট কেনার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অফিসে বাড়ছে মানুষের ভিড়। যদিও ঈদে নিয়মিত ফ্লাইটের টিকিট ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। আর অতিরিক্ত ফ্লাইটের টিকিটও শেষের পথে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এয়ারলাইন্সগুলো সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলোর ঈদের টিকিট দুই মাস আগে থেকেই কেনা শুরু করেছেন যাত্রীরা। বাড়তি চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সগুলো। এজন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরক্তি ভাড়া।
এ বছর ঈদের আগে ১৪ জুন শেষ কর্মদিবস। রোজা ২৯টি হলে ১৬ জুন আর ৩০টি হলে ১৭ জুন ঈদ হবে। এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, ১৩ থেকে ১৫ জুনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যারা নিয়মিত আকাশপথে ভ্রমণ করেন তাদের অধিকাংশ মানুষ প্রায় দুমাস আগে থেকেই সংগ্রহ করেছেন ঈদের সময়ের টিকিট। এছাড়া, সড়কপথে দীর্ঘ যানজট এড়াতে প্রতিনিয়ত নিয়ত বাড়ছে আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা। যাত্রীদের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে টিকিটের দামও। দেশে ৪টি এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, বরিশাল, রাজশাহী, সৈয়দপুর—এই সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে ঈদের সময় সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী রুটের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
মঙ্গলবার (৫ জুন) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে অনেককেই টিকিটের খোঁজ করতে দেখা গেছে। টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। মিরপুর থেকে এসেছিলেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দূরের পথে বাসে গেলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। দ্রুত যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটের আশায় এসেছিলাম। কিন্তু যেদিনের টিকিট চেয়েছিলাম, সেগুলো নাকি অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।’
বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, ঈদে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এয়ারলাইন্স ভেদে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকা, ঢাকা থেকে যশোর রুটে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা, ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। বিজনেসে ক্লাসে এ ভাড়া আরও বেশি। চট্টগ্রাম রুটে ৪ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার, কক্সবাজার রুটে ৫ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা এবং সিলেট রুটে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এয়ারলাবইন্সগুলোর ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি একটু ভিন্ন। বিমানের বিভিন্ন ভাগের সিটের বিভিন্ন রকম দামে টিকিট বিক্রি হয়। প্রত্যেক সিটের টিকিটেরও প্রাইস মিনিমাম ও হাই স্কেল রয়েছে। শুরুতে সব টিকিট কিন্তু নিয়মিত দামে বিক্রি হয়েছে। শেষমুহূর্তে চাহিদা বাড়ায় প্রাইস স্কেল হাই রেটে হয়ে গেছে।’
নভোএয়ার জানিয়েছে, যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে নভোএয়ার ১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী রুটে প্রতিদিন অতিরিক্ত দু’টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বর্তমানে নভোএয়ার প্রতিদিন ঢাকা থেকে সৈয়দপুর ৪টি, যশোর ৩টি ও রাজশাহীতে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৬টি, কক্সবাজার ৪টি, সিলেট একটি করে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ঈদের আগের ৪দিন এবং ঈদের ছুটি শেষে ৪দিনের টিকিটের চাহিদা সব চেয়ে বেশি।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে চারটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এগুলো হলো—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলাএয়ারলান্স ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ সব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্যদিকে নভোএয়ার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, যশোর ও সৈয়দপুর—এই ৬টি রুটে এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ যশোর, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার—এ ৪টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।