ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায় সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলছে নাভানা ফার্মা

নাভানা ফার্মার

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও ওষুধশিল্পে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো করোনা এ খাতে আশীর্বাদই বয়ে এনেছে বলা যায়। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বেড়েছে সমানতালে। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগত মানের উন্নয়ন ও সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সুবাতাস বইছে এ খাতে।

প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর পর দেশের অন্যতম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী নাভানা ফার্মা নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য দেশের শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে কোম্পানিটির সেফেলোস্পেরিন ইউনিটের সংস্কার, উৎপাদন ভবন নিমার্ণে, নতুন ইউটিলিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং নিমার্ণ করা হবে। আর এজন্য প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

এ লক্ষ্যে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের বিডিং সোমবার (৪ জুলাই) শুরু হয়েছে।

সারাদেশে ৪৮৬টি মানব দেহের ও ভেটেরিনারী ৪৮টি পণ্য বাজারজাত করে নাভানা ফার্মা। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নিজস্ব জমিতে ঔষধ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ১৯৮৬ সালে অগ্রযাত্রা শুরু করে। এই যাত্রা সফল ও সার্থক করতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৪ হাজার ৬ জনের একদল দক্ষ পেশাজীবি।

কোম্পানিটির ১৯৮৮ সালে সাধারন উৎপাদন ইউনিট চালু হয়। ২০০৩ সালে ভেটেরিনারী প্রোডাকশন ইউনিট শুরু হয়। ২০০৯ সালে সেফালোস্পোরিন ইউনিট শুরু করা হয়, যা একটি উচ্চমানের সেফালোস্পেরিন সুবিধা নিশ্চিত করে এবং ২০১২ সালে svpo ইউনিট শুরু করা হয়। আর ২০১৩ সালে পেনিসিলিন ইউনিট এর নতুন সুবিধা শুরু করা হয়।

নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে সারাদেশে ৪৮৬টি হিউম্যান (মানব দেহের) ও ভেটেরিনারী ৪৮টি পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। এজন্য সারাদেশে অবস্থিত ২১টি বিক্রয় ডিপোর মাধ্যমে অর্ডার পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্যামিষ্টসপে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এ কোম্পানিটির ওটিসি বাজারে প্রতি বছর অবস্থান বাড়ছে। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর বেশীরভাগ বিক্রয় গ্রামীণ, টায়ার ২ এবং টায়ার ৩ শহরে কেন্দ্রীভূত হয়। যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০% বসবাস করে।

শেয়ারবাজারে আসতে যাওয়া নাভানা ফার্মা 4p এবং MSP জরিপ অনুসারে প্রেসক্রিপশন বিবেচনায় ১৫তম বৃহতম কোম্পানী এবং ২০২২ সালে IMS এর Q-1, জরিপে বাজার অবস্থান, বাজার শেয়ার ও বিক্রয় বৃদ্ধির হারের বিবেচনায় কোম্পানীটি বাংলাদেশে ২৬তম অবস্থানে রয়েছে।

IMS রিপোর্ট Q1 অনুযায়ি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর অনেকগুলো ঔষধ মোলিকুলের বাজারে শীর্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। এরমধ্যে রয়েছে-CURAFIN, CLONIPRES, ITRACON, LULIDER, OSMINA, L-AMLO।

শেয়ারবাজারে আসতে যাওয়া এ কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২১-মার্চ ২২) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৩৯ টাকা। আর বিগত ৫টি আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২.৫২ টাকা। কোম্পানিটির ২০২২ সালের ৩০ মার্চ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে (পূণ:মূল্যায়নসহ) ৪৩.৫৩ টাকায়। আর পূণ:মূল্যায়ন ছাড়া এই সম্পদের পরিমাণ ১৯.০২ টাকা।

নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের কাট-অফ প্রাইস থেকে ৩০% ডিসকাউন্টে আইপিওতে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যু করা হবে। এছাড়া ফেয়ার ভ্যালু থেকে ২০% উপরে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ১৫% শেয়ার ইস্যু করবে। যা ২ বছর লক-ইন থাকবে।

উল্লেখ্য কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল ও ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস। কোম্পানিটিকে গত ৮ জুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৮২৬তম সভায় বুক বিল্ডিংয়ে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়।