কাবুল দখলের পর সংবাদকর্মীদের মুখোমুখী হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তালেবানের সম্ভাব্য সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ ; যেখানে তিনি বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।
মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তালেবানের এ মুখপাত্র বলেন , তালেবান নারীদের অধিকার রক্ষায় শ্রদ্ধা রাখবে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে ।
এর আগে তালেবান সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং নারীদের কর্মক্ষেত্র ফিরে আসার আহবান জানায় ।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্রের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ :
” এটা কোনো ক্ষুদ্র অংশের গর্বের বিষয় নয় ; বরং তা পুরো জাতির । আমি পুরো জাতিকে অভিনন্দন জানাতে চাই এবং তাদের স্বাগত জানাতে চাই । স্বাধীনতা এবং মুক্তি মানুষের মৌলিক অধিকার । এর জন্য আমরা ২০ বছর সংগ্রাম করেছি এবং বিজয় অর্জন করেছি । এটা ছিলো আমাদের অধিকার এবং আমরা তা পেয়েছি ”
” আমরা সত্যিকার অর্থে একটা সংকট কাল অতিক্রম করেছি । আমাদের কিছু ভুল ছিল – যা সাম্রাজ্যবাদীদের সুযোগ করে দিয়েছিলো । আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই , আফগানিস্তান আর কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্র নয় , সংঘাতের জায়গা নয় । ”
”যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে , তাদের সবাইকে আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি । আমরা যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি চাইনা । আমরা যুদ্ধের সূচনাকারী সকল কিছু দূর করতে চাই । ইসলামিক ইমারত অফ আফগানিস্তান কারো প্রতি শত্রুতা পোষণ করেনা এবং করতেও চায়না । আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই । আমরা দেশের ভিতর এবং দেশের বাহিরে কোথাও শত্রু রাখতে চাই না ”
” আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা একটি শক্তিশালী ইসলামী সরকার গঠন করতে যাচ্ছি ।(সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর) কারা কাবুলে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো , তা আমাদের নজরে এসেছে । আমরা কাবুলের জনগণকে নিশ্চিয়তা দিয়ে বলতে চাই যে , আমরা তাদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা সুরক্ষা দিতে চাই । নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে । ইনশা-আল্লাহ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে । ”
” আফগানিস্তানে বিশেষ করে কাবুলে যত দূতাবাস আছে , এগুলো আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । আমরা এগুলোতে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিবো ; সর্বোপরি সব দেশ এবং তাদের প্রতিনিধি , বিদেশি মিশন , আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ এবং দাতা সংস্থাও এর আওতাভুক্ত থাকবে । তবে কাউকেই আমাদের বিরুদ্ধে কাউকে কোনো কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না ”
” আপানাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে । আমাদের বাহিনীগুলো আপনাদের নিরাপত্তায় ২৪ ঘন্টায় নিয়োজিত আছে । আমরা কাবুলে কোনো সংঘাত চাইনি ।”
” সকল প্রদেশ বিজয়ের পর আমাদের পরিকল্পনা ছিলো আমাদের বাহিনীকে কাবুল গেটে থামিয়ে দেওয়া এবং শান্তিপূর্ণভাবে সেটি করেছি । কিন্তু আগের সরকারের খুবই অযোগ্য ছিলো ; তারা নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি । তারা ইসলামি ইমারতের বদনাম করার জন্য ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেছিলো ; এজন্য আমরা আমাদের সৈন্যদের কাবুলে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছি এবং তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে । ”
”আমি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই আফগানিস্তানে কারও কোনো ক্ষতি করা হবেনা । আমাদের আঞ্চলিক এবং প্রতিদেশি দেশগুলোকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই , আফগানিস্তানের মাটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবেনা । ”
” আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশা করি । আর আমাদের মৌলিক অধিকার রয়েছে ইসলামের মৌলিক বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা করার এবং এর জন্য আমরা অনেক ত্যাগ করেছি । আর আফগান জাতির অধিকার রয়েছে তাদের নিজস্ব পদ্ধতি এবং বিধি-বিধানের আলোকে দেশ পরিচালনা করার , যাতে তাদের জাতির লোকজন উপকৃত হয় । তবে এ নিয়ে অন্য জাতির চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই ।”
” নারীদের অধিকার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ । ইসলামি ইমারত অফ আফগানিস্তান নারীদের অধিকার সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর । এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না ; আমরা ইসলামি বিধি-বিধানের আলোকে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করবো । আমাদের ভাই–বোনরা সমান অধিকার পাবে । তারা বিভিন্ন সেক্টরে ইসলামের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে কাজ করতে পারবে ।”
” আমরা আমাদের অর্থনীতি উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো”
” মিডিয়া কর্মীদের অনুরোধ করবো তারা যেন শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেন । আজকের সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করায় আপনাদেরকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি । ”
(আল-জাজিরা থেকে অনুবাদিত )