ইরান ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে যাচ্ছে : জাতিসংঘ

২০১৫ সালের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়ানোর কাজে হাত দিয়েছে ইরান। ছবি : সংগৃহীত

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) বলছে, ইরান ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে যাচ্ছে। এটা এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তির সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে একথা বলা হয়েছে।

তবে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হয়। ইরান এ থেকে অনেক দূরেই থাকছে। কিন্তু ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইরান চার শতাংশের কম সমৃদ্ধকরণ করার কথা।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ গুপ্তহত্যার পর গতমাসে ইরানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি বিলে ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা আছে।

আইএইএ জানায়, ইরানই তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে ২০ পর্যন্ত সমৃদ্ধকরণের কথা জানিয়েছে। পর্বতঘেরা এলাকায় মাটির নিচে স্থাপিত ‘ফরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্টে’ এটি করার কথা জানিয়েছে ইরান। তবে চিঠিতে কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।

এর আগে আইএইএ জানায়, ইরানের কাছে অন্তত দুই হাজার ১০৫ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশকে চুক্তি থেকে বের করে নিয়ে ইরানের ওপর নানাবিধ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের পরই ইরান চুক্তিভঙ্গের পথে হাঁটা শুরু করেছে। তবে এই চুক্তির পুনরুজ্জীবন সম্ভব বলে আশাবাদী যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন।

পার্লমেন্টে পাস করা বিলে বলা হয়, দুই মাসের মধ্যে ইরানের তেল ও আর্থিক খাতের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া হলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এতে দুই পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জ ও ফরদোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদেরও ঢুকতে না দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। চুক্তিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সর্বাধিক ৩০০ কেজি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তির বাইরে নিয়ে গেলেও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইরান চুক্তির শর্তসমূহে মানতে রাজি হলে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে ফিরিয়ে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন- ইয়েমেনে বিস্ফোরণ ও গুলিতে নিহত বেড়ে ২৬

ইউ-২৩৫ ধরনের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হয়।

পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে হলে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধ করা এক হাজার ৫০ কেজি ইউরেনিয়াম লাগবে ইরানের। তবে সেগুলো আবার ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যদি অস্ত্র বানাতে চায়, তাও সেটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।