কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে এনপি কম্পাউন্ড সার

কৃষিখাতের উৎপাদন

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কৃষিখাতের উৎপাদন এবং নানান সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস এ্যান্ড এগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাক হাসান। দীর্ঘ আলোচনায় কৃষিখাত আর নতুন প্রজন্মকে আশার আলো দেখিয়েছেন। অন্যতম কৃষি উপকরন সার নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘিদিন। এরই মধ্যে এন পি কম্পাউন্ড সার নামে কৃষকের খরচ সাশ্রয়ী এবং অধিক ফলন উপযোগী সারের বাণিজ্যিক বিপণন শুরুর কথা জানিয়েছেন বিশিষ্ট এই কর্মকর্তা। কৃষিখাতে শিক্ষিত তরুণদের প্রনোদনা দিয়ে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দেশ সমাচারের সঙ্গে।

দেশ সমাচার: আপনি দীর্ঘদিন সার নিয়ে কাজ করেছেন, কৃষকরা কিভাবে বেশী ফসল ফলাতে পারেন?

মোস্তাক হাসান: কৃষকরা ফসল আবাদে অনেক ক্ষেত্রেই নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের অসম ব্যবহার করছেন। এতে শস্যের ফলন যেমন একদিকে কমছে অন্যদিকে জমির উর্বরতা শক্তিও হারাচ্ছে। আবার মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহারে খরচ বেশি হচ্ছে কৃষকদের। এসব চিন্তা করে আমরা বিশেষ ধরনের সারের উদ্ভাবন করেছি। এন পি কম্পাউন্ড সার নামের এই সারের ব্যাবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হারানোর যে ক্ষতি তা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে। তাছাড়া কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী এবং অধিক ফলনে এটি বেশ কার্যকর যেটি এরই মধ্যে আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রমান পেয়েছি।

দেশ সমাচার: এন পি কমাউন্ড সারের উপকারিতা জানতে চাই?

মোস্তাক হাসান: এন পি কম্পাউন্ড সারটি মূলত কম্পাউন্ড সার, যা মিশ্র সার থেকে ভিন্ন। এটি একসাথে চারটি সারের প্রয়োজনীয়তা মেটাবে। বিশেষ করে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, জিপসামের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে জমিকে রাখবে অম্ল প্রতিরোধী। এই সারে নাইট্রোজেন অবমুক্ত হয় ধীর গতিতে, ফলে গাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য নাইট্রোজেন সহজলভ্য হয়। এই সারে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের আনুপাতিক হার ২ অনুপাত ১ আছে যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক এজেন্সি ফাওএর রিপোর্টের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ।

এন পি কম্পাউন্ড সারে নাইট্রোজেনের কার্যকারিতা ইউরিয়া সারের চেয়ে অনেক ভালো এবং ধীর গতিতে নাইট্রোজেন অবমুক্ত হয় বিধায় গাছ নাইট্রোজেন দীর্ঘ সময়ে ধরে সংগ্রহ করতে পারে। অতিমাত্রায় চাষাবাদের জন্য মাটিতে অম্লত্ব বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে এই সার রোধ করে। এছাড়াও আরো দুইটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ক্যালসিয়াম এবং সালফার থাকাতে জিপসাম সারের প্রয়োজন নেই। আমরা মাঠ পর্যায়ে এন পি কম্পাউন্ড সার ব্যবহার করে শতকরা পাঁচ ভাগের উপর ফলন বৃদ্ধির ফলাফল পেয়েছি। অন্যদিকে ইউরিয়ার সাথে তুলনা করে দেখা গেছে, এই সার ব্যবহারে ৩০% পর্যন্ত নাইট্রোজেন কম ব্যবহার করেও একই ফলন পাওয়া যায়।

দেশ সমাচার: এন পি কম্পাউন্ড সারের বাণিজ্যিক উৎপাদনের সবশেষ কি অবস্থা?

মোস্তাক হাসান: বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনি খামার করেছি। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা, নড়াইল উপজেলা, দিনাজপুর উপজেলা, রাজশাহীর পবা উপজেলা এবং বিরি খামারে প্রদর্শনি প্লট করে আমরা ইতিমধ্যে আশানুরুপ ফলাফল পেয়েছি। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজারস এ্যান্ড এগ্রোকেমিক্যালস লিমিটেড এই সারের বাণিজ্যিক উৎপাদনে খুব শিগগিরই যাবে বলে আশা করছি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়ে আমরা এন পি কম্পাউন্ড সারের বাজারজাতকরণের প্রাথমিক কার্যক্রমগুলো চালাচ্ছি। যশোরের নোয়াপাড়ায় দশ একর জায়গা জুড়ে বার্ষিক এক লাখ সত্তর হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন কারখানা করেছি। এই কারখান থেকে বছরে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন সারের উৎপাদন সক্ষমতা আছে।

বাজারে আমদানিকৃত এবং সরকারি কারখানায় উৎপাদিত সারের উপর সরকারের যে প্রণোদোনার নিয়ম নীতি আছে তা বেসরকারিভাবে উৎপাদিত সারের উপর প্রয়োগ করা গেলে এই শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

দেশ সমাচার: এবারের বাজেটে কৃষিখাত কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে?

মোস্তাক হাসান: সরকার কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে সবকিছুই করছে। তবে শুধু ভর্তুকি দিলেই হবেনা, কৃষকরা যা উৎপাদন করছে তার ন্যয্য দাম না পাওয়া গেলে এটি কাজে আসবেনা। সরকারের ভর্তুকির উপকারিতা সরাসরি কৃষকরা পায় সে বিষয়ে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কৃষি ইস্যুতে সরকারের বড় ভর্তুকিটা থাকে সারের ক্ষেত্রে। আমি মনে করি এই সাবসিডিটা অব্যাহত আছে এবং সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সারে যে প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানে বেসরকারি সার উৎপাদনের খাতকে সম্পৃক্ত করা দরকার বলে মনে করি। এটি করা গেলে কৃষক সহ দেশীয় শিল্প সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সার আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানিতে জোর দিতে পারলেই আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।

দেশ সমাচার: তরুণদের নিয়ে আপনার মূল্যবান পরামর্শ কি?

মোস্তাক হাসান: তরুনরা চাকুরির জন্য বসে না থেকে উৎপাদনমুখী কৃষিতে আসলে তারা লাভবান হবে। কৃষিখাতে এখন প্রচুর সম্ভাবনা। এ খাতের একজন উদ্যোক্তা হলে খুব সহজেই সফল হওয়া সম্ভব। তাই আমি বলবো শিক্ষিত তরুণরা বসে না থেকে উৎপাদনমূখী কৃষিতে আসলে নিজে এবং দেশও উপকৃত হবে।

দেশ সমাচার: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মোস্তাক হাসান: দেশ সমাচারকে ধন্যবাদ, কৃষির সম্ভাবনা নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে পত্রিকাটি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।

আরো পড়ুন- শিম চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য