পরিবেশ রক্ষায় নগর কৃষি

পরিবেশ রক্ষায় নগর কৃষি

মোঃ আশরাফুল আলম : আমার ছোটবেলা কেটেছে গ্রামে। সেখানে সবুজ সমারহের পরিবেশ কাটিয়েছিলাম জীবনের ষোলটি বছর। উচ্চশিক্ষার জন্য যখন ঢাকা আসি তখন এক দমবন্ধ অবস্থায় মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম। এখনকার ঢাকার চাইতে তখনকার ঢাকা আরও বেশি সবুজ থাকলেও একটা দম আটকে যাওয়া অবস্থায় মধ্যে ছিলাম।

এমন যদি হতো, ঢাকা শহর পুরোটা সবুজে ছেয়ে গেছে। নগরের বিশাল সব অট্টালিকার ছাদ ও বারান্দা সবুজে ঢেকে গেছে। সেইসব গাছ থেকে প্রতিদিন ফরমালিন ও বিষমুক্ত টাটকা ফল ও শাকসবজির স্বাদ পাচ্ছি খাবার টেবিলে। বুকভরে কার্বনমুক্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিচ্ছি। অনেকে ভাববে এটা একটা কল্পনা বিলাস মাত্র কিন্তু চাইলেই এটা সম্ভব করা যায়।

উপমহাদেশের অত্যান্ত প্রাচীন শহর ঢাকার রয়েছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে।  প্রায় চারশত বছরের পুরাতন ঢাকাকে বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বানিজ্যের নগরী। ১৩৪ বর্গ মাইলের এ শহরে ১ কোটি ৪১ লক্ষ মানুষ (আদমশুমারী২০১১) বাস করলেও পরিকল্পনার অভাব ও অব্যবস্থাপনা্র জন্য এ শহর হারিয়েছে তার জৌলুস। দিনকে দিন এই জনসংখ্যা আরো অনেক বাড়ছে।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে প্রতি বর্গ মাইলে ১ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। বিশ্ব ব্যাংক বলছে ২০৩৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যা গিয়ে ঠেকবে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাবদ্ধতা, গাছ-পালার অভাব, ড্রেনেজ সিস্টেম ইত্যাদি শহরকে দিনে দিনে হুমকির মুখে ফেলছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাল, নদী, ডোবা, বৃক্ষ নিধন করে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে ফলে পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কমে যাচ্ছে সবুজের পরিমাণ।

এদিকে ঢাকার বাহিরে যে পরিমান বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হয়, ঢাকাতে সেই তুলনায় নেয়া হয় না।যে পরিমাণে গাছ কাঁটা হয় তার অল্প পরিমাণই রোপণ করা হয়। গাছ কার্বনডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। এ ছাড়াও বৃষ্টিপাত ঘটাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। গাছের পাতা, ডাল, বাকল, নানান ধরনের ঔষধ হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বৃক্ষ নিধনের ফলে গরমকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শীতকালে বাড়ছে ঠান্ডা এবং পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে।

গবেষণায় দেখা গেছে,ছাদবাগান আছে এইরকম দালানের কক্ষের ভেতরের তাপমাত্রাগ্রীষ্মকালে ১.০ থেকে ১.২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত কমায়। এছাড়া ছাদবাগান করলে আশেপাশের এলাকায় কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমান ৭০ পিপিএম পর্যন্ত কমায়। যদি ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে ছাদবাগানের প্রসার করা যায়, তবে এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বায়ু দূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমিয়ে পরিবেশ দূষণ কমাবে এবং শহরকে বাসযোগ্য করবে। এছাড়া নগর কৃষির মাধ্যমে শহরের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে জাতীয় উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ তে বিশেষায়িত কৃষির আওতায় ছাদকৃষির প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ছাদবাগান স্থাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ও আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাও বেশ জরুরি। সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্নউন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছাদবাগান সম্প্রসারণের কৌশল নির্ধারণ করাও প্রয়োজন।ছাদ বাগান ও নগর কৃষির জন্য উন্নয়ন সংস্থার নানান ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া এখন সময়ের দাবি। সেইসাথে ছাদবাগানে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা বাঞ্ছনীয়।

লেখকঃ পরিবেশ কর্মী এবং এসিআই ফার্টিলাইজারের মার্কেটিং ও সেল্‌স এডমিন পদে কর্মরত।