মৌলভীবাজার জেলার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা এখন পর্যটনের সম্ভাবনা। বড়লেখায় প্রকৃতির নান্দনিক ছোঁয়ায় ভরপুর । ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে যেসব কারণে এ উপজেলা আকর্ষণীয়, তা হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর ও চা বাগান, প্রকৃতির জলকন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এগুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে ২৫ মাইলের সবুজ অরণ্যঘেরা পাথারিয়া পাহাড়। রয়েছে অসংখ্য ঝিরি ঝরনা। বোবারতল এলাকায় আছে দৃষ্টিনন্দন গগনটিলা। ভ্রমণপিপাসুদের আপন করে নেয় নৈসর্গিক এসব স্থান। তবে বড়লেখার এই পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর খুব একটা উদ্যোগ নেই।
বড়লেখায় পড়েছে হাকালুকি হাওরের বড় একটি অংশ । বর্ষায় অথৈ পানির ভাসান হাওরের কূলঘেঁষা গ্রামগুলো যেন পানির বুকে ভেসে থাকে। এ এক অন্যরকম সৌন্দর্য। বর্ষার গোধূলি বেলায় সূর্য অস্ত যায় হাওরের পানির রঙে আগুন ছড়িয়ে। তখন নতুন সাজ ধরে রংমাখা পানি। রঙের পালক হয়ে নাচে হাওরের বুকে ওঠা ছোট-বড় ঢেউ। হাজার হাজার মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সেই পানিতে স্নান করতে। আসেন নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে। সেই দৃশ্য স্মৃতিতে ধরে রাখতে প্রিয়জনের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হন তারা। অন্যদিকে শীত মৌসুমে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হাওরে আসে অতিথি পাখির ঝাঁক।
প্রকৃতির জলকন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। পাথারিয়া পাহাড়ের বুক থেকে ঝরছে তার অবিরল জলধারা। দিগন্তবিস্তৃত সবুজের মাঝে বছরজুড়ে ঝরনার শব্দের সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি ও পর্যটকদের উচ্ছ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়। পর্যটকদের পদচারণায় বছরজুড়ে মুখর থাকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। মাধবকুণ্ড, হাকালুকি হাওর ছাড়াও পাথারিয়া পাহাড়ের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য মৌসুমি ঝরনা। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে পরীকুণ্ড, ঝেরঝেরি, ফুলবাগিচা, বান্দরডুবা ও পুছুম। হাকালুকির হাল্লা এলাকায় আছে পাখিবাড়ি। বছরজুড়ে এ বাড়িতে নানা প্রজাতির পাখির বসবাস। এ ছাড়া বড়লেখায় রয়েছে ১৮টি চা বাগান, বোবারতল এলাকার গগনটিলা। আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থান।
বড়লেখায় এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তেমন উদ্যোগ নেই। এ উপজেলার পর্যটনের স্থানগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং এ থেকে কীভাবে সরকারের ব্যাপক আয় সম্ভব, তা নিয়ে পরিকল্পনার কথা খুব কমই শোনা যায়। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটন স্থানে উন্নয়ন হওয়ায় তা দেশের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বড়লেখার পর্যটন স্থানগুলোর উন্নয়ন হলে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
প্রায় আট বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, তৎকালীন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমিনুর রহমানের উদ্যোগে মাধবকুণ্ড ও হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের সুবিধার জন্য কিছু উন্নয়ন কাজ হয়।
তাদের উদ্যোগে হাকালুকি হাওরের তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা এলাকার অদূরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বন বিভাগের বিট কার্যালয়, পাখিবাড়ি থেকে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়। রাস্তা হওয়ায় হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকে। মাধবকুণ্ড এলাকায় সে সময় পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ঈগল চত্বর, বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য, মৎস্যকন্যা, পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য বেঞ্চ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তবে এ কাজের পর দুটি স্থানে আর কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি।
সম্ভাবনাময় অন্য স্থানগুলো চিহ্নিত করে মহাপরিকল্পনা তৈরি করে উন্নয়ন হলে পর্যটকদের আগমন বাড়বে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কর্মসংস্থান হবে পর্যটন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ রকম বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে এর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।
আরও পড়ুন :- আজ থেকে খুলছে সুন্দরবন
বর্তমানে হাওর ট্যুরিজম সব জায়গায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে নেত্রকোনার উচিতপুর, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওরের বুকে বিশাল রাস্তা তৈরি করে ওইসব অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের হাওরের বুকে আরেকটি বিশাল রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওর এলাকায় পরিবেশ রক্ষা করে এ রকম রাস্তা তৈরি হলে হাওরের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি উপজেলার যোগাযোগ সহজ হবে। পাশাপাশি মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা হবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে বড়লেখা হবে অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন শহর।