ইলিশ পাচ্ছেন না চাঁদপুরের জেলেরা

ইলিশ

চাঁদপুরের নদী এলাকায় জলদস্যুদের দৌরাত্ম্যের কারণে ইলিশ পাচ্ছেন না চাঁদপুরের জেলেরা। এতে এবার এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেনি জেলার অধিকাংশ মৎস্যজীবী। যদিও শেষ কয়েক মাসের তুলনায় গত দুই সপ্তাহ কিছু ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা।

তারা জানান, মার্চ-এপ্রিলে প্রজনন শেষে মাছ সাগরে চলে যায়। পরবর্তীতে আবার ডিম ছাড়ার জন্য এ অঞ্চলে আসে। কিন্তু সাগর থেকে নদীতে আসতেই উপকূলীয় এলাকা তথা নদী মোহনা এবং দক্ষিণাঞ্চলের এলাকাগুলোতেই বৈধ-অবৈধ বিপুল পরিমাণ জালে বেশিরভাগ মাছ ধরা পড়ে। যে কারণে বাজারে উপকূলীয় এলাকার মাছই বেশি।

মৎস্যজীবীরা বলেন, চাঁদপুরের শেষ প্রান্ত থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যেখান দিয়ে ইলিশ মাছ উঠে তার সবখানেই কারেন্ট জাল ফেলা হচ্ছে। সেখানকার জেলেরা অনেক ধরনের জাল ফেলে। বিশেষ করে অবৈধ কারেন্ট জাল ২০-৫০ হাত দূরে দূরেই ফেলা হচ্ছে। কারেন্ট জাল এত বেশি ফেলা হচ্ছে যে বড়-ছোট সব ধরনের মাছই সেখানে আটকা পড়ছে। ফলে চাঁদপুরের নদী অঞ্চলে ইলিশ আসতে পারছে না।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের হাইমচরের নদী অঞ্চলে রাতে জাল ফেলা যায়। জেলার সীমান্তবর্তী এ উপজেলার নৌ-সীমায় জলদস্যু ও ডাকাতদের ভয়ে রাতে নদীতে যাওয়া যায় না। রাতে জেলেরা মাছ শিকার করে ফেরার পথে মাছ, নৌকার ইঞ্জিনসহ সঙ্গে থাকা সবকিছু লুটে নিচ্ছে চক্রটি।

হাইমচরের মৎস্যজীবী জহির প্রধান ও জেলে রফিক পাটওয়ারী বলেন, আমাদের গুল্ডি জালের নৌকা। নদীতে জাল ফেললে এসব নৌকায় ১২-১৫ জন লোক লাগে। এদের খাওয়ার খরচ, নৌকার জ্বালানিসহ দিনে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এ অবস্থায় আমরা যদি ১০ হাজার টাকার মাছও পাই তাহলেও লাভের মুখ দেখবো না। আবার ২-৩ জন জেলে কারেন্ট জাল আর ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে ৩-৪ হাজার টাকার মাছ পেলেও তারা চলতে পারবে। তাদের খরচ কম। যাদের গুল্ডি জাল তারা অধিকাংশই লোকসানের মধ্যে আছে। তারা বলেন, আশা করি সামনের দিনগুলোতে বেশি মাছ পাবো।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (নদী কেন্দ্র)-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার) ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, কারেন্ট জাল সর্বত্রই নিষিদ্ধ। এটি মাছের জন্য ক্ষতিকর। কারেন্ট জাল একেবারে সমূলে নির্মূল করা উচিত।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, কোথায় কতটি জাল ফেলতে পারবে এ ধরনের কোনও নীতিমালা নেই। যাদের জেলে কার্ড আছে, তারা নদীতে নামবে। যাদের জাল আছে তারা জাল ফেলবেই। আমরা তাদের নিষেধ করতে পারবো না।

আরও পড়ুন- যমুনার ভাঙনে বিলীন গ্রামের পর গ্রাম

তিনি বলেন, আশা করি আমরা ওই পথে এগিয়ে যাবো। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সব জায়গাতেই কম বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আর আগামী ৫ অক্টোবর আমাদের একটি মিটিং আছে। সেখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ সবাই থাকবেন। ওই মিটিংয়ে জেলে প্রতিনিধিরা জলদস্যু এবং নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।