শীতের ভোরে ফিনফিনে পাতলা ধূসর কুয়াশা নেমেছে আপনার আঙিনায় ও ফুলের ক্ষেতে। প্রাকৃতিক মসলিনের সে নেকাব সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে হলুদ গাঁদার দল, গুটিসুটি মেরে শিশিরে ভিজছে চন্দ্রমল্লিকারা আর ডালিয়া? ঋজু গ্রীবায় মাথা দুলিয়ে সগর্বে যেন বলছে সে ওঠো, জেগে ওঠো সব ফুল। ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর শীতকাল মানেই নানারকম রকম ফুলের সমাহার। যারা গ্রামের বাস করেন তাদের অনেকে বাড়ি সামনে উঠোনে কিংবা রাস্তার ধারে ফুলগাছের চাষ করে থাকেন। তবে শহুরে জীবনে এক্ষেত্রে টবই একমাত্র ভরসা। শীতের ফুলের মধ্যে গাঁধা, ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। এছাড়া কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার ইত্যাদি ফুল ফোটে।
মানব সভ্যতা আর ফুলের অগ্রযাত্রা প্রায় একই সঙ্গে এগিয়েছে বলে ধরা হয়ে থাকে। আর তাই পশ্চিম এশিয়ায়ই প্রথম ফুলের চাষ শুরু হয় বলে বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে ধারণা পাওয়া যায়। সাড়ে চার হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতার স্মারক মোহেঞ্জোদারোতে মাটির পাত্রে পদ্ম ফুলের নকশা দেখতে পাওয়া যায়। শাপলা আর পদ্ম ফুল তো ছিল মিসরীয়দের রাজশক্তির প্রতীক। সনাতন ধর্মে দেবতাকে পূজার অর্ঘ্য দিতে ফুলের ব্যবহার অপরিহার্য। আর আধুনিককালের ফুলসজ্জায় জাপানিদের ইকেবানার খ্যাতি তো বিশ্বজুড়ে।
১৬ শতাব্দীতে কিছু বিজ্ঞানী অলঙ্কারিক ফুল নিয়ে গবেষণা শুরু করলে ফুল চাষ অন্যরকম মাত্রা পেতে থাকে।
উদ্যানতত্ত্বের আওতায় ফুল চাষ বা ফ্লোরিকালচার বিকশিত হতে থাকে। ১৬ আর ১৭ শতাব্দীজুড়েই গ্রিনহাউস ধারণার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসে কাট-ফ্লাওয়ার চাষ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। বসন্তের ফুল শীতের শুরুতেই ফোটাতে শুরু করে তারা। ১৭ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপিয়ানদের অনুকরণে আমেরিকায়ও কাট-ফ্লাওয়ার চাষ শুরু হয়।
তবে সে সময় পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। ফলে চাষবাস যা হতো, তা সীমিত পরিসরেই। ইউরোপিয়ানরা যখন এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন তাদের মাধ্যমে ফুল চাষও ছড়িয়ে পড়ে। ফুল চাষ কেবল গ্রিনহাউসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অন্য ফসলের মতো খোলা মাঠে এর চাষ শুরু হয়। এরপর আকাশপথে পরিবহন এবং ফ্রিজিং ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য হওয়া শুরু করলে ফুল চাষ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করতে থাকে। যেখানেই ফুল চাষের উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি পাওয়া যায়, সেখানেই ফুল চাষ শুরু হয়। এরপর এসব ফুল উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও সংরক্ষণ করে সেগুলো বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আসলে পুরোপুরি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ফুল চাষের ব্যাপক অগ্রযাত্রা হয় আশির দশকে। সে সময় বিশ্বে ফুল বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি ডলার। নব্বইয়ের দশকে এসে এর পরিমাণ দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। আর এখন এর পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বর্তমানে বিশ্বে যে পরিমাণ ফুল উৎপাদন হয় তার ৬৮ শতাংশ হল্যান্ড একাই করে। এই ফুল থেকে তারা বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় করে থাকে; যা তাদের মোট রপ্তানি আয়ের ৫ ভাগের এক ভাগ। বিশ্বে মোট উৎপাদিত ফুলের ১০ শতাংশ উৎপাদন করে জার্মানি ও কলম্বিয়া, ৬ শতাংশ উৎপাদন করে ইসরায়েল ও ইকুয়েডর। থাইল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও আরও কিছু দেশ মিলে বাকি ফুল উৎপাদন করে। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন ডলারের ফুল রপ্তানি করে থাকে। থাইল্যান্ড তো অর্কিড চাষকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। প্রতি বছর বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে তারা ২০০ কোটি টাকার অর্কিড রপবতানি করে থাকে। সূত্র: এ ব্রিফ হিস্টোরি অব কাট-ফ্লাওয়ার প্রোডাকশন।
প্রকৃতির আশীর্বাদে শীতের দিনগুলোতে ফুল ফোটে খুব ভালো। আর শীত দিনের ফুলের সংখ্যাও প্রচুর। চাইলে আপনি ১০০ রকম ফুল দিয়ে আপনার বাগান ভরে দিতে পারেন। যদিও এসব ফুলের প্রায় সবই বিদেশী। তবে এসব বিদেশিনীকে এখন আর পরদেশী ভাবতে ইচ্ছে করে না, ওরা যেন এ বাংলারই ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছে। শুধু সংখ্যায় যে এরা প্রচুর তা নয়, রূপ-বৈচিত্র্যে আর কোনো মৌসুমেই এরা এতটা মুগ্ধ করতে পারে না। সংখ্যা বেশি বলে কোন কোন ফুল এই শীতে চাষ করবেন, তা ভাবতে গেলে সত্যিই ফাঁপরে পড়তে হবে। তবে অতশত ভাবাভাবির দরকার নেই। গাঁদা ফুল দিয়ে শুরু করতে পারেন। বড় বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, দেশি গাঁদা, রঙিন গাঁদা, হলুদে লাল মিশানো জাম্বো গাঁদা, লম্বা গাছে দেশের জাত রাজ গাঁদা ইত্যাদি নানা জাতের গাঁদা ফুলের চারা এখন পাওয়া যাচ্ছে আশপাশের প্রায় সব নার্সারিতেই। এরপরই বেছে নিতে পারেন চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, কসমস, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি। এমনকি গোলাপকেও সঙ্গী করতে পারেন।
বারান্দা বা গ্রিলে ঝুলানো টবে লাগানোর জন্য পিটুনিয়া, ন্যাস্টারশিয়াস, অ্যাস্টার, ভারবেনা ইত্যাদি উত্তম। গ্রিলে লতিয়ে দেওয়ার জন্য নীলমণি লতা, মর্নিং গ্লোরি, রেল লতা, সুইট পি ভালো। টবের জন্য নিতে পারেন গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, কারনেশান, ক্যালেন্ডুলা, অ্যাস্টার ইত্যাদি। জমিনের বাগানে সব ফুলই লাগাতে পারেন।
গাছ তো হলো, এখন ঠিক করে নিন কোথায় সেগুলো কীভাবে লাগাবেন। বাড়ির আঙিনায় ফাঁকা জমি নেই তো কী হয়েছে? মন খারাপ না করে টবেই লাগিয়ে ফেলুন। স্থায়ী বাগান করার চেয়ে টবে লাগানোই যেন বেশি সুবিধে। ইচ্ছেমতো টব সাজিয়ে ঘরদোরের যেকোনো জায়গায় টুকরো টুকরো বাগান করে নেওয়া যায়। আজ যেখানে গাঁদার বাগান দেখছেন, কালই সেখানে দশটা টব সাজিয়ে করে ফেলুন চন্দ্রমল্লিকার বাগান, পরশু করুন ডালিয়ার। এই বৈচিত্র্য কি জমিনে আনতে পারবেন? ছাদ থাকলে সেখানে টবে হরেক রকম গাছ লাগিয়ে খুব সহজে আপনিও আপনার বাড়িতে একটি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান গড়ে তুলতে পারেন।
শীতে ভালো ফুল ফোটানোর টিপস: রোদেলা জায়গায় গাছ লাগান। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। গাছের চেহারা দুর্বল দেখা গেলে পরপর তিন-চার দিন এক ঝাঁজরি পানির মধ্যে দুই চা চামচ ইউরিয়া সার গুলে ওপরের নিয়মে সেচ দিন। সরিষার খইল কয়েক দিন একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তা গুলে ১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার চারদিকে দিন। অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত দিন। ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল-পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। স্বাভাবিক সময়ের আগে গাছে কুঁড়ি এলে তা ভেঙে দিন। গাছের গোড়া ভেজা থাকলে পানি দেবেন না। প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার মাটি হালকা নিড়িয়ে/খুঁচে দিন। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন। প্যানজি গাছের বয়স হলে ফুল ছোট হয়ে আসবে। এ অবস্থায় গোড়া থেকে ছেঁটে দিলে নতুন গজানো ডালে আবার ভালো ফুল ফুটবে। অ্যান্টিরিনামের ভালো ফুল পেতে হলে শুধু মাঝের ডালটি রেখে অন্য সব ডাল কচি অবস্থায় ছেঁটে দেবেন।
ভবনের ছাদ, বারান্দা বা সিঁড়িঘরে পোড়ামাটির টবে কাঁচা মাটি রেখে ফুল চাষ করতে পারেন। তবে সব ফুলের গাছ কিন্তু টবে ভালো হয় না। আর এখন যেহেতু শীতকাল, তাই আগেভাগেই জেনে নিতে হবে কোন কোন ফুল গাছ লাগাবেন।
যে গাছ লাগাবেন: শীতকালে টবে গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া প্রভৃতি লাগাতে পারেন।
টব সংগ্রহ: প্রথমেই উপযুক্ত সাইজের টব সংগ্রহ করবেন। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব চলবে না।
মাটি: প্রতি টবের জন্য দোআঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু’মুঠো ছাই মেশাতে পারেন।
চারা: মাসখানেক বয়সের ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার বেলায় অল্পবয়সী ভালো ও তরতাজা দেখে চারা বা কলম লাগানো ভালো।
যশোরে ফুলের গ্রাম গদখালী- অপার সম্ভাবনা: ফুলের রাজ্য গদখালীতে একটি ফুল গবেষণা কেন্দ্র করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিলেন ফুলচাষিরা। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, সরকার ইতোমধ্যেই তাদের এ দাবি মেনে এর জন্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। গদখালীর রজনীগন্ধা কোল্ড স্টোরেজের পাশে ৫০ একর জমিও বাছাই করা হয়েছে এ জন্য। তাড়াতাড়িই এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফুল ও ফুলবীজ সংরক্ষণের জন্য স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের যে দাবিও তারা করে আসছিলেন, সেখানেও সাড়া দিয়েছে সরকার। গদখালীর পানিসারা গ্রামে ফ্লাওয়ার প্রসেসিং ইউনিট অ্যান্ড মার্কেট নামে একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। এ জন্য এক একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। টেন্ডারও হয়ে গেছে। আবদুর রহিম বলেন, এগুলো হয়ে গেলে এ অঞ্চলে ফুল চাষে অভাবনীয় অগ্রগতি হবে।
যশোর শহর থেকে ঐতিহাসিক যশোর রোড (যশোর-বেনাপোল হাইওয়ে) ধরে বেনাপোলের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলেই গদখালী বাজার। পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা, ফুলিয়াসহ অসংখ্য গ্রামের মাঠজুড়ে চোখে পড়বে কেবলই ফুলের বাগান। রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ দেশী-বিদেশী নানারকম ফুল। ১৯৮২ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এই গদখালী থেকেই শুরু হয়েছিল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ। এখন ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের শার্শা, মণিরামপুর, কেশবপুর উপজেলার অসংখ্য গ্রামে। এই গ্রামগুলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে সারা বছরই নানা জাতের ফুল উৎপাদন করা হলেও সবচেয়ে ভালো মানের ফুল পাওয়া যায় ডিসেম্বর জানুয়ারিতে। আর সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয় ফেব্রুয়ারিতে। দেশে তাজা ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় ৫২টি জেলায় যায় গদখালীর ফুল। সীমিত আকারে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় সাড়ে ১৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছেন প্রায় ছয় হাজার চাষি। যশোর জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী এখানে প্রতি বছর ১২০ কোটি পিস ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। ফ্লাওয়ার সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী এ চাষের সঙ্গে এখন দেশের ৫০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।