রফতানিযোগ্য রঙিন আম পেলো বাংলাদেশ

রঙিন আম

বিদেশে রফতানির জন্য রঙিন আমের যেসব শর্ত থাকে সেগুলো পূরণের মতো কোনও আম ছিল না বাংলাদেশে।অবশেষে সেই খরা কেটেছে। দীর্ঘ গবেষণায় রঙিন আমের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের  আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

রঙিন আম  উদ্ভাবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, নাবী জাতের এই আমের প্রধান বৈশিষ্ট্য দেশের অন্য জাতের আমগুলো শেষ হওয়ার পরেই পাকবে এই আম। এতে দাম পাওয়া বা রফতানি নিয়ে মোটেই চিন্তা করতে হবে না আমচাষিদের। বলছেন,  বিদেশে রফতানিযোগ্য নতুন এই আমটিই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম এবং একমাত্র রঙিন সংকরজাত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রশাসনিক ভবন থেকে ডানদিকে কিছুদুর যেতেই দেখা মিলবে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন আম।রঙিন আম

 

২০০৫ সালে বারি আম-৩ ও আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে সংগ্রহকৃত পালমারের (পালমার আমেরিকার একটি রঙিন জাত) সংকরায়নে  নতুন এই জাতটি উদ্ভাবন করেছেন জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর জমির উদ্দিন। দীর্ঘ গবেষণার পর আসে এই সাফল্য। যা এখন উন্মুক্তকরণের অপেক্ষায়।

ডক্টর জমির উদ্দিনে জানান,দীর্ঘ ১৪ বছরের গবেষণার পর আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পেরেছি। পেরেছি চাষীদের চাহিদা পূরণ করতে। আগস্ট মাসের শুরুতে যখন বাজারে ভালো জাতের আমের সংকট দেখা দেয়; তখন বাজারে পাওয়া যাবে এই আম।

ড. জমির উদ্দিন জানান, নতুন এই আমের নামকরণ হয়নি এখনও। তবে তিনি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, রঙিন এই জাত অবমুক্ত হলে সুযোগ তৈরি হবে বিদেশে রফতানিরও। এই তথ্য এরইমধ্যে কৃষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নাবী জাত হওয়ায়, এই আমের স্থানীয় বাজারমূল্য নিয়েও আশাবাদী এই আম গবেষক।

দেশে অন্য যেসব লাল ও সিঁদুরে বর্ণের আম দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো কেন রফতানিযোগ্য নয় এমন প্রশ্নের জবাবে এই উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানান, দেশে এসব জাতের আম মূলত গুটি জাতের। এগুলো টক ধরনের, পাকলেও পুরো মিষ্টতা থাকে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এছাড়াও মাংসল অংশ তুলনামূলকভাবে কম, আঁশযুক্ত, আকারে ছোট ও ওজন কম হয়ে থাকে। ফলে এমন কিছু জাতের রঙ থাকলেও সেগুলো দেশি বাজারেই সেরা আমের তালিকায় আসতে পারে না। রফতানির সম্ভাবনা তো নেই-ই। তবে এ ধরনের আমের মানোন্নয়নে আরও অনেক কাজ করার আছে বলেও অভিমত দেন তারা। দীর্ঘ গবেষণায় উদ্ভাবিত রঙিন আমটি পুরোই ব্যতিক্রম বলে উল্লেখ করেন তারা।

দেশে বারি উদ্ভাবিত আমের ১২টি জাতের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত ৯টি নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। সে হিসেবে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের তালিকায় এটি হবে ১০ম সংযোজন।বিদেশে রফতানিযোগ্য নতুন এই রঙিন আমটি দেশের আম বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এটাই প্রত্যাশা করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।