আব্দুর রব মিয়া (৮২)। বয়সের ভারে জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। চলতে হয় অন্যের সহযোগিতায়। কথা বলেন অনেকটাই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে । আর শরীরে নানা জটিল রোগতো অনেক আগে থেকেই। তবে তার অর্থ সম্পত্তির কমতি নেই। কিন্তু তারপরও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি। এ বয়সে এসেও জীবন কাঁটাচ্ছেন খেয়ে না খেয়ে। চিকিৎসার অভাবে জটিল রোগগুলো জেঁকে বসেছে শরীরে।
নিজের কনিষ্ঠ ছেলে এ. কে. এম রুস্তব আলী ওরফে (খোকন )! ছিলেন ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দখল করেছেন পরিবারের সবার সম্পওি! এখন পরিবার সম্পত্তি চাইতে গেলে হুমকি-ধমকি ও নিজের বাবার শরীরে হাত তুলতেও ছাড়েনি এই এ. কে. এম রুস্তব আলী ওরফে খোকন।বাবার একটি দাঁতও ফেলে দিয়েছে তিনি। শেষ বয়সে যেখানে আরাম আয়েশে কাটিয়ে দেয়ার কথা তার বাবার। সেখানে ছেলের কাছে নির্যাতনের শিকার ও জালিয়াতির বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এ. কে. এম রুস্তব আলী (খোকন) বৃদ্ধ বাবার সম্পত্তি দখলে নিয়ে এখন মালিকানার জন্য জোরজবরদস্তি করছে বৃদ্ধ বাবার উপর। শুধু তাই নয় এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে, বাবাকে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- মশিয়ালীতে গুলি করে দুজনকে হত্যা
আরও পড়ুন- বান্দরবানের সদর উপজেলায় নিহত ৫
এই ঘটনায় আব্দুর রব মিয়া তার ছোট ছেলের বিরুদ্ধে মিরপুর উপ-কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগও করেন। সেখানে তিনি বলেন, মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ হতে লীজপ্রাপ্ত একটি প্লটে নির্মাণ কাজ চলছিল। তখন আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে আমার সর্বকনিষ্ঠ ছেলে খোকনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছি, যাতে আমার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজগুলো করে এবং দেখভাল করেন। অথচ সে আমাকে কোনো কিছু না বলে, ভবন দখল করে মালিকানা নেয়ার নানা পাঁয়তারা করছে। মিরপুরে রাবেয়া কমপ্লেক্সে ছয়তলা ভবনটি বাণিজ্যিক হওয়ায় এর বাজার মূল্য অনেক।
আরও পড়ুন- স্কুলছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা
এদিকে ভবন তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য তার অন্য চার ভাই-বোনকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন্ জনকে দিয়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে তার বাবা অভিযোগ করেন, এসআইবিএল ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা ও ভাড়াটিয়াদের থেকে অগ্রিম ভাড়াসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কোনো হিসেব না দিয়ে তার কনিষ্ঠ সন্তান তা আত্মসাৎ করেছে। শুধু তাই নয় বছর চারেক আগে আব্দুর রব মিয়া নিজে জামিনদার হয়ে তার কনিষ্ঠ ছেলেকে ৮০ লাখ টাকা ব্যাংক লোন নিয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে সেই টাকাও পরিশোধ করেনি তার ছেলে। এনিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি।
গণমাধ্যমকে আব্দুর রব মিয়া বলেন, এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে আমার ওপর অনেকবার নির্যাতন করে সে। গত আড়াই বছর ধরে আমার কোনো খোঁজখবর রাখেনা। উল্টো তার কাছে গেলে আমার গায়ে হাত তোলে। অথচ প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ পাঁচ লাখ টাকা আসে তার। এসব টাকার কোনো হিসেব দেয় না। আমার অন্য ছেলে-মেয়েরা এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন- মধুপুরে এক পরিবারের চারজনকে হত্যা
তিনি বলেন, আমি ৮২ বছরের একজন বৃদ্ধ মানুষ। আমি সব সময় অসুস্থ থাকি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রতিমাসে আমার হাজার পাঁচেক টাকার ওষুধ লাগে। কিন্তু আমি কিছুই পাচ্ছি না। আমি সুচিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। গত কয়েকদিন আগে আমার বড় মেয়ে স্বামী দুই সন্তান রেখে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সে সময় বড় মেয়ে স্বামীর চিকিৎসার জন্য তার কাছে টাকা চাইলেও সে দেয়নি। এখন এই মেয়েটার আর্থিক অবস্থা নিয়ে আমি চিন্তিত।
বাবার সঙ্গেই অবিচার করে ক্ষান্ত হয়নি এ. কে. এম রুস্তব আলী (খোকন)! তিনি তার তিন ভাই-বোনকে ফুসলিয়ে ব্যাংক থেকে পনের লাখ টাকা ব্যাংক লোন নিয়েছে। সেই টাকাও দিতে গড়িমসি করছে। আব্দুর রবের বড় ছেলে এ. কে. এম রয়হান উদ্দিন বলেন, যখন আমাদের বাড়ির কাজ চলছিল, তখন বাড়ির কাজ করাতে টাকা লাগবে বলে আমাদের দিয়ে ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত লোন নিয়েছে। এখন সেই লোনের টাকাও পরিশোধ করছে না। সেগুলো আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবারের সবাই খুব আর্থিক সংকটে আছে। এসব বিষয়ে ছোট ভাইয়ের (খোকন) কাছে গেলেও সে বার বার আমাদের অপমান করেছে। যে ভাই তার বাবার গায়ে হাত তুলতে পারে, মেরে দাঁত ফেলে দিতে পারে সে ভাইয়ের জন্য কি করতে পারে, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভুক্তভোগী আব্দুর রব মিয়া তার কনিষ্ঠ ছেলের বিরুদ্ধে মিরপুর জোনের উপ-কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন। পরে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন মিরপুর থানার এসআই আনিসুর রহমানকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এই প্রতিবেদকে বলেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে অভিযুক্ত এ. কে. এম রুস্তব আলী (খোকন)-র সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি বলেছেন কাগজপত্র নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলেও এখনো তিনি দেখা করেননি। এ বিষয়ে এ. কে. এম রুস্তব আলী খোকনের তিনটি মোবাইল নম্বরে গত তিনদিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।