ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপাকে বাড়িওয়ালারা

ঢাকা শহর

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা আজিজুল হক রায়পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় তিনতলার একটি বাড়ি বানানোর কাজ শেষ করেছিলেন জানুয়ারি মাসেই। কিন্তু করোনার সংক্রমণের কারণে ওই বাড়ির ১২টি ফ্ল্যাটের আটটি এখনো ফাঁকা। অথচ প্রতি মাসেই বেতন থেকে কেটে নিচ্ছে ব্যাংক ঋণের টাকা।

আজিজুল হক বলেন, তিনতলার বাড়িতে ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর দুইটিতে আমি পরিবার নিয়ে থাকি। আর দুই ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া আছে। বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। করোনার কারণে ভাড়াটিয়া পাওয়াটাই এখন দুষ্কর। কিন্তু প্রতিমাসেই বেতন থেকে ঋণের টাকা কাটা যাচ্ছে।

আজিজুল হকের মতো অনেক বাড়িওয়ালা এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বানিয়ে বিপাকে পড়েছেন। একে তো করোনার কারণে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিমাসেই গুনতে হচ্ছে ঋণের টাকা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্চ মাসে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা ঝামেলায় পড়তে শুরু করেন তারা। বিশেষ করে মার্চের ২৬ তারিখ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার করার পর থেকেই অনিয়মিত হতে শুরু করে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া।

এ সঙ্কট কাটতে না কাটতেই বাসা খালি করার ‘যন্ত্রণায়’ পড়েন বাড়িওয়ালারা। করোনার কারণে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দেওয়ায় নতুন ভাড়াটিয়াও পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় অনেক বাড়ির ফ্ল্যাট এখন ফাঁকা।

গেন্ডারিয়ার এলাকার আনিসুর রহমান বলেন, গেন্ডারিয়া এলাকায় আমার দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে। একটিতে আমি পরিবার নিয়ে থাকি, অন্যটি ভাড়া। যেটি ভাড়া দেওয়া ছিলো, সেটির ভাড়াটিয়াও ভালো ছিলো। প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিয়ে দিতেন। করোনার কারণে আর্থিক সঙ্কটে পড়ায় মে মাসে এসে তিনি অ্যাডভান্সের টাকা থেকে বাসা ভাড়া কেটে নিতে বলেন। আমি মেনে নেই। কিন্তু জুনের এক তারিখে তিনি দুই মাসের নোটিশ দিয়ে বাসা ছেড়ে দেন এবং এ দুই মাসের ভাড়াও অ্যাডভান্স থেকে কেটে নিতে বলেন।

তিনি বলেন, জুনের দুই তারিখে আমি টু-লেট লাগালেও, এই ২৭ দিনেও আমি কোনো ভাড়াটিয়া পাইনি। জানি না, আগস্টের এক তারিখে নতুন ভাড়াটিয়া পাবো কিনা। আমার নিজেরও ব্যবসার অবস্থা ভালো না। এখন আমি নিজেই বিপদের মুখে।

টিকাটুলী এলাকার বাড়িওয়ালা সাঈদ হোসেন বলেন, জানুয়ারি মাসে আমার বাসার একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা হয়। কিছু কাজ করানোর কারণে মার্চ মাসে নোটিশ দেই। এখনও পর্যন্ত কোনো ভাড়াটিয়া পাইনি। অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দেওয়া নিয়েও ঝামেলা হচ্ছে। আমরা বাড়িটা বড় করতে ইতোমধ্যে ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেছি। এ অবস্থায় কি হবে বুঝতে পারছি না।

ভাড়াটিয়া পরিষদ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, আমাদের কাছে থাকা হিসাব মতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার লোক বাসা ছেড়ে দিয়েছে।