পরিবেশ দিবসে নগর কৃষি ভাবনা

মো. আশরাফুল আলম: বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারা বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন’ এবং এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ- প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।

এদিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এই বছরের সদ্য সমাপ্ত মে মাসে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ি গ্যাসের বৃদ্ধির পারদ অবিরাম বেড়েই চলেছে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রানের অন্যতম উপায় হচ্ছে বেশী পরিমানে গাছ লাগানো।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। এই শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০। ঢাকামুখী মানুষের স্রোত প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে দিনকে দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।

ঢাকা শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে গরমের পরিমান বাড়ছে তো বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করতে হলে প্রচুর পরিমানে গাছ লাগানো প্রয়োজন। যেহেতু সমতলে গাছ লাগানোর জায়গা তেমন একটা নেই, সেহেতু বাড়ির ছাদে ও ব্যালকনিতে সঠিকভাবে বাগান করা হলে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা শহরের কংক্রিটের কাঠামো মূলত শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যহত করছে। অধিক জনসংখ্যা, অতিরিক্ত নগরায়ন, যানবাহন, জলাধার ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে ঢাকার পরিবেশ দূষণ বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় অনেক বেশি৷

ঢাকা শহরের গাছপালার পরিমাণ ১৯৮৯ সালে ছিল ২৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে কমে ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে৷ অন্যদিকে ঢাকা শহরের বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১৯৮৯ সালে ছিল ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু এটি ২০০৯ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আর এই বছর কত হয়েছে সেটা আমরা প্রায় সবাই জানি।

ঢাকায় মাটি ও খোলা যায়গার অস্তিত্ব দিনকে দিন কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে খোলা জায়গা। বাড়ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। ইট-কাঠের বদলে দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইস্পাতের কাঠামো ও কাচে মোড়ানো বহুতল ভবন। বাণিজ্যিক ভবনগুলোর টেকসই স্থাপনা ও দৃষ্টিনন্দনের বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে হালকা, কিন্তু শক্তিশালী ধাতব পাত, ফাইবার ও গ্লাস।

এতে করে তাপমাত্রা আরো বাড়ছে কেননা, সূর্য থেকে তাপ ও আলো ধাতব ও কাচের কাঠামোর একটিতে পড়ে অপরটিতে প্রতিফলিত হয়। বারংবার প্রতিফলনের কারণে কিছু নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা আশপাশের এলাকার তুলনায় সামান্য বেড়ে যায় এবং শহরজুড়ে তৈরি হয় অসংখ্য হিট আইল্যান্ড বা তাপ দ্বীপ।

এদিকে ঢাকার বাহিরে যে পরিমান বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে তার তুলনায় ঢাকাতে সেটা অপ্রতুল। তবে আশার কথা হল জাতীয় বৃক্ষ মেলা ২০২২ এক্ষত্রে বেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। গাছ লাগানোর এই মৌসুমে খোলা যায়গা কিংবা রাস্তার ডিভাইডারে প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, পড়ার টেবিলসহ ভিবিন্নস্থানে গাছ লাগাতে হবে। এতে করে একদিকে যেমন বিপন্ন পরিবেশ রক্ষায় একধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে অন্যদিকে নিজেদের অক্সিজেনের যোগান নিজেদেরই দেয়া সম্ভব হবে।

লেখকঃ পরিবেশকর্মী ও ‘গো ইউথ আশরাফুল আলম’ নামক ইউটিউব চ্যানেলের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর