দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবসা সম্প্রসারণ

সাইফ পাওয়ারটেক

বিদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাফিন ফিডার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে আপাতত আটটি জাহাজ পরিচালনা করবে সাইফ পাওয়ারটেক।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) এক বিবৃতে এ তথ্য জানিয়েছে আবু ধাবি বন্দর কর্তৃপক্ষ এডি পোর্টস গ্রুপ। এডি পোর্টস গ্রুপের মেরিটাইম ক্লাস্টারের প্রধান নির্বাহী ক্যাপ্টেন মাকতুম আল হাউকানি বলেছেন, “সাইফ পাওয়ারটেকের সাথে আমাদের নতুন সহযোগিতা শুধুমাত্র গ্রাহকদের অনেক বাড়তি সুবিধা দেবে। দ্রুত এবং কম খরচে সেবা পাওয়া যাবে। এই যৌথ উদ্যোগ সামুদ্রিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব রাখবে।”

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ৫৮ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডেল করে দেশের একমাত্র টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক। কোম্পানিটি মোংলা ও পানগাঁও বন্দরেও কনটেইনার হ্যান্ডেল করে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আরও সহজে এবং কম খরচে পণ্য আমদানি করা যাবে।

২৮ ফেব্রুয়ারি সাইফ পাওয়ারটেক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানায় যে তারা জাহাজ পরিচালনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাফিন ফিডার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

সাফিন ফিডার হলো আরব আমিরাত ভিত্তিক কনটেইনার ফিডার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এডি পোর্টস গ্রুপ কর্তৃক ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি মূলত আরব উপসাগর ও ভারতীয় উপমহাদেশের কনটেইনার পরিবহন নেটওয়ার্কে সেবা দিয়ে থাকে।

এডি পোর্টস গ্রুপ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চুক্তির শর্তাবলির আওতায় সাফিন ফিডারস ও সাইফ পাওয়ারটেক ১৫ বছরের মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে কার্গো সেবা দিতে একসঙ্গে কাজ করবে।

এই উদ্দেশ্যে সাইফ পাওয়ারটেক সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাইফ ইউনাইটেড শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং নামে একটি সহযোগী কোম্পানি চালু করেছে।

এদিকে এডি পোর্টস গ্রুপ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে তারা বাল্ক শিপিং সেবা দেবে। এমইএনএ (মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা) অঞ্চল এবং এশিয়ান উপমহাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্যে সেবা দেবে তারা।

বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামুদ্রিক অবকাঠামো ও প্রকল্পগুলোতে যৌথভাবে উন্নয়ন ও বিনিয়োগের জন্য ভবিষ্যৎ-সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকেও এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সাইফ পাওয়ারটেক লজিস্টিক এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং স্বয়ংচালিত বা গাড়ির ব্যাটারির সাথে জড়িত। পাশাপাশি কোম্পানিটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, লজিস্টিকস ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অটোমোটিভ বা গাড়ির ব্যাটারির ব্যবসাও করে।

১৫ বছরের চুক্তি সম্পন্ন

চুক্তির শর্তাবলির আওতায় সাফিন ফিডারস ও সাইফ পাওয়ারটেক ১৫ বছরের মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে কার্গো সেবা দিতে একসঙ্গে কাজ করবে। কোম্পানিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ফুজাইরা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য বন্দরে আমদানি পণ্য পরিবহনের জন্য আটটি জাহাজ পরিচালনা করবে।

সাইফ পাওয়ারটেকের বিনিয়োগ পরিকল্পনা

সাইফ পাওয়ারটেক সম্প্রতি মোংলা বন্দরে মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনাল, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং মোংলা বন্দরে একটি জেটি নির্মাণে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। কোম্পানিটি ৪৭৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে উজবেকিস্তানের এরিয়েল সার্ভিস অ্যান্ড সাপোর্টের সঙ্গে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে যুক্ত হয়েও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে।

এছাড়াও সাইফ পাওয়ারটেক মোংলা বন্দরে একটি বহুমুখী জেটি নির্মাণ করছে। এই জেটি নির্মাণে তারা প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মোংলা বন্দরের এই জেটিতে কনটেইনার ও কার্গো জাহাজ উভয়ই হ্যান্ডল করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়াও কোম্পানিটি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসায় ৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। সেখান থেকে তারা ১০০ কোটি টাকা আয় করবে বলে আশা করছে।

২০২১-২১ অর্থবছরে বন্দর পরিচালনা, ব্যাটারি ব্যবসা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাইফ পাওয়ারটেক ৪৭৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকা আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। একই বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৬ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে ৬২ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা লাভ করেছে।