ইসলামী বিনোদন: সমস্যা ও সম্ভাবনা

এনাম খান
এনাম খান

সংস্কৃতি হলো একটি জাতির বিশ্বাসের বাস্তব প্রকাশ। সংস্কৃতি দিয়েই একটা জাতিকে চেনা যায়। প্রত্যেকটা মানুষই তার নিজের মাঝে সংস্কৃতি লালন করে। যেই সংস্কৃতি দিয়ে তার বৈশিষ্ঠ্যগুলো উপলব্ধি করা যায়। আর এই সংস্কৃতির মানদ- তৈরী করে দিয়েছেন আমাদের রব আল্লাহ তা‘য়ালা। তাঁর নির্দেশিত বিধান বা মানদন্ড-ই হলো সুস্থ সংস্কৃতি। আর এর বাইরে যা কিছু আছে সব অসুস্থ সংস্কৃতি। তাই কবি মতিউর রহমান মল্লিক বলেছেন,‘যা সুন্দর তা-ই সংস্কৃতি’।

আমরা জানি যে, সংস্কৃতি হলো মানুষের আচার, আচরণ, চলাফেরা, কথা-বার্তা ইত্যাদি। এক কথায় মানুষ যা করে সেটাই তার সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতির অসংখ্য পার্টের মধ্যে একটি পার্ট হলো চিত্তবিনোদন। সব বিনোদনই হালাল নয়। বিনোদনের আলাদা মানদন্ড- রয়েছে, যার দ্বারা আমরা হালাল বিনোদন গ্রহণ করতে পারি। বর্তমানে মিডিয়াতে যে বিনোদনের প্রচার হয় তার অধিকাংশ হারাম বিনোদন। মিডিয়াগুলোতে ইসলামী বিনোদন বাড়াতে হলে বিনোদনের মাধ্যমগুলো জানতে হবে। সেই সাথে তার শর‘ঈ বিধানাবলী জানতে হবে, কতটুকু ইসলাম অনুমতি দিয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামী বিনোদনের কার্যক্রম শুধু হামদ্, না‘তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কবি ফররুখ, নজরুল, আব্বাস উদ্দিন তালিম প্রমূখ ইসলামী বিনোদনের কাজ শুরু করে গেলেও সাংগঠনিক রূপ কেউ দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু পরবর্তিতে ৮০এর দশকে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সংস্কৃতির এই ধারাকে সাংগঠনিক রূপ দান করেন। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠে প্রায় ২৫০ শিল্পীগোষ্ঠী। ইতোমধ্যে এই শিল্পীগোষ্ঠীগুলো দেশের মানুষের হৃদয় কেড়েছে। আর তাদের প্রকাশিত বিনোদনগুলো দেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। রমজান এলে এই বিনোদনের চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

কিন্তু বিনোদনগুলো প্রচার হলেও তার গুণগত মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। যাকে আমরা ইসলামী বিনোদনের সমস্যা ধরে নিতে পারি । যেমন: ইসলামী বিনোদনে হালাল-হারাম সমস্যা, বৈচিত্রের অভাব, অর্থনৈতিক , পেশাগত, পোশাকের, নাটকীয় সমস্যা, নারী মডেল, প্রয়োজনীয় জিসিপত্র, এ রকম আরো অনেক সমস্যা। যার ফলে ইসলামী বিনোদন পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী সময়মত ভালো মানের প্রোডাকশন প্রদর্শন করা সম্ভবপর হয়ে উঠছেনা। তবে বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হওয়ায় ইসলামী বিনোদনের সম্ভাবনা খুব বেশি। কারন দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পীগোষ্ঠীগুলোতে যে পরিমান সাংস্কৃতিক কর্মী রয়েছে, তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইসলামী বিনোদন প্রতিটি বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে পরকালে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে উপস্থাপন করবে, ইনশা আল্লাহ।

লেখক: সংগীত শিল্পী ও গবেষক