রক মেলন ফল চাষের আদ্যোপান্ত

রক মেলন ফল

রক মেলন খেতে সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসম্পন্ন, রক মেলনের বাজার সম্প্রসারিত হলে স্বল্প জমিতেই অল্প পরিশ্রমে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের। স্বাদ ও পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনেক উপকারী এই ফল দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে সাম্মাম নতুন একটি ফল। নতুন ফল হলেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই সুস্বাদু এই ফলটি চাষে আগ্রহী থাকলেও এর চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে চাষ করতে পারেন না।

রক মেলনের চাষাবাদ নিয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন জানান, সাধারণ তরমুজের চেয়ে এর স্বাদ বেশ ভালো, মিষ্টিও বেশি। এই প্রথম মির্জাগঞ্জে এটি চাষাবাদ হচ্ছে। থাইল্যান্ড থেকে এটির বিজ আনা হয়েছে। এবারে বেশ রকমেলনের ফলন হয়েছে উল্লেখ করে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, হেক্টর প্রতি ১৫ টন এবারে উৎপাদন হয়েছে। প্রতিটি ফলের ৩ থেকে সাড়ে তিন কেজি করে ওজন হয়েছে। প্রতি কেজি তিনশত টাকা দরে কৃষকরা বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। রকমেলন চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে আরাফাত হোসেন বলেন ফলটি বাংলাদেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় একটি ফল। এরইমধ্যে কৃষকরা এটি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

চলুন জেনে নেই সুস্বাদু ফল সাম্মাম চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে-

চাষের সময়ঃ  এই বীজ বপনের সঠিক সময় গরমের সময় ১। শীত আসার পূর্বে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর ২। মার্চ থেকে জুন। সাধারণত খোলা মাঠে হানি জুস জাতটি ২ বার চাষ করা যায়। (বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে- বীজ থেকে চারা হবার পরে যাতে অতিবৃষ্টির পানির মধ্যে এই গাছ না পড়ে)। বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পলি টানেল বা পলি হাউজ করলে খুব ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়ে গ্রিন হাউজে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করেও চাষ করা সম্ভব।

জমি প্রস্তুতিঃ জমি প্রথমে চাষ দিয়ে পরে বিঘা প্রতি ৫ ট্রলি (৫ টন) শুকনা গোবর ও প্রায় ২৫০ কেজি জিপসাম দিয়ে পুনরায় চাষ দিয়ে ৩ সপ্তাহ ফেলে রাখতে হবে।

মাটিঃ যে কোন ভালো মানের মাটি যেমন -বেলে মাটি, বেলে-দোয়াশ মাটি, দোয়াশ মাটি, লক্ষ্যনীয় বিষয় মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে যাতে তলদেশ পর্যন্ত সেঁচের ব্যবস্থা হয়, মাটির উপরের অংশে কোনভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবে না।

বীজ বপনঃ ছাঁদে বাগান করার ক্ষেত্রে- ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবে বা এমন মাপের যে কোন পাত্রে ২ টি অর্ধ ইঞ্চি মাটির নিচে এই বীজ বপন করতে হবে। মাটি পরিমানে কম হলেও এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমান জৈবসার এবং জৈব উপাদান বিদ্যমান থাকতে হবে। পাত্রের মাটি সব সময় ঝুরঝুরে রাখতে হবে এবং ভালো হবে টব বা পাত্রের মাটির উপরের অংশ কোণ প্লাটিক কাগজ বা ভালো গেঞ্জির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে। বানিজ্যিকভাবে জমিতে করলে মাটিকে উঁচু করে বীজ বপন করতে হবে এবং সেঁচের জন্য ড্রেইন ব্যবস্থা রাখা যাতে গাছের গোঁড়ায় অতিরিক্ত পানি না জমতে পাড়ে এবং এক একটি চারার দূরত্ব হবে দেড় থেকে ২ (দুই) ফিট এবং এক একটি মাদাতে – ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ অথবা চারা রোপণ শেষে হালকা সেচ দিতে হবে।

জমিতে লক্ষণীয় বিষয়ঃ জমিতে চারা অবশ্যই উঁচুতে থাকতে হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে। মাটির উপরের অংশ অবশ্যই মালচিং করতে হবে। প্ল্যাস্টিক কাগজ বা মোটা কাগজ অথবা ভালো গেঞ্জির কাপড় দিয়ে এই মালচিং করতে পাড়েন।

বীজ অঙ্কুরোদগমঃ ৫-১০ দিনের মধ্যে অনেক সময় তাপমাত্রা কম হলে ১২-১৫ দিন সময় ও লাগে।

ফুল এবং ফলঃ বীজ অংকুরোদ্গমন হবার পর থেকে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে পরিপূর্ন ফল পাওয়া যায়।

সার সুপারিসঃ মাটি তৈরি করার সময় জৈবসার এবং জৈব উপাদান ভালো ভাবে মিশ্রিত করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে নাট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং সালফার এর উপস্থিতি আছে কিনা প্রয়োজনে সার প্রয়োগের পূর্বে মাটি পরীক্ষা করে নিতে পাড়েন বাণিজ্যিকভাবে করার আগে আর যারা ছাঁদে চাষ করবেন তারা ভার্মি কম্পোষ্ট প্রয়োগ করতে পাড়েন এবং ফসফেট, ফসফরাস ও সালফার আছে এমন মিশ্র সার প্রয়োগ করতে পাড়েন।

সেচঃ চারা অংকুরোদ্গমন হবার পর থেকে ২-৩ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই সেচ এমন দেয়া যাবে না যে পাত্রে অথবা চারা নিচে অনেক পানি জমে থাকে। ফুল আসার সাথে সাথে সেচ ব্যবস্থা প্রতি একদিন পর পর দিতে পাড়লে ভালো ২ দিন -৩ দিনের দিন দিলেও হবে।

অতিরিক্ত পরিচর্যাঃ যেহেতু এটি একটি লতা জাতীয় গাছ এবং এর লতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই এর লতা ধারণের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ২ (দুই) ভাবে এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পাড়ে ১। মাচা পদ্ধতি ২। মাটিতে খড়কুটো বিছিয়ে দিয়ে।

পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ এই ফলে হলুদ মাছি পোকা এসে গাছের পাতা ফুটো করে দেয় কান্ড এবং পাতার রস চুষে রস টেনে গাছের ক্ষতি করে এবং ফল আসার পরে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয় তাতে গাছের ফল পচা রোগের সৃষ্টি হয় এবং ফল পচে যায়, সমাধান হলো মাটি এবং গাছ প্রতিনিত লক্ষ্য রাখতে হবে, মাছি যাতে না আসে তার জন্য প্রায়শ জৈব বালাইনাশক নিতে হবে না পেলে নিকটস্থ কৃষি কর্মকর্তাকে দেখিয়ে পোকার জন্য ঔষধ নিতে পাড়েন আর ফল যাতে ছিদ্র না করতে পাড়ে তার জন্য ফল আসার সাথে সাথেই আপনার গাছের ফলটি ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফলনঃ এই ফল গাছের সঠিকভাবে চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন ভালো মত হলে এক একটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১২ টি পর্যন্ত ফল পেতে পাড়েন। পরাগায়ন এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে হাত পরাগায়ন করাতে পাড়েন। ফলের আকৃতিগত ভাবে গোলাকার হবে এবং এক একটি ফল ওজনে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম অনেক ক্ষেত্রে এর চেয়ে ও বেশী ওজন হতে পাড়ে। পরিপক্কভাবে ফল পাকার ২-৩দিন আগেই ফলটি গাছ থেকে কেটে সংরক্ষণ করতে পাড়েন তারপরে বাজারজাত করতে পাড়েন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে আমাদের দেশে এই ফল একদমই নতুন তারপরেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে – আমাদের দেশের শহুরে সুপারসপ গুলোতে যেমন- এগোরা, মিনাবাজার, স্বপ্ন, ডেইলিশপিং এমন আরও অনেক সুপারসপে পাবেন আর মূল্য ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে কোন কোন শপে এর চেয়ে ও বেশী বিক্রি হচ্ছে। যারা বাড়ীর ছাঁদে চাষ করছেন তারা ফ্রিজে রেখে ফলটি খেলে অনেক বেশী মিষ্টি স্বাদ পাবেন।