বোরো ধানের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের কৌশল

বোরো ধানের পোকামাকড়

আর কয়েকদিন পর থেকেই বোরো ধানের কাইচ থোড় আসা শুরু করবে। এরপর সবুজ থেকে সোনালী রঙ নেবে ধান। এসময়টাতে বোরো ধানের বাড়তি যত্ন ও পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের জন্যে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ।

কৃষি তথ্য সার্ভিস এর পরিচালক ও কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তীর সাথে আলাপকালে জানান, বোরো ধানের চাষাবাদে এই সময়টাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বলেন, যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন, তাদের ধানের চারার বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরি প্রয়োগ করবেন। ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া দিয়ে থাকলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে না। সার দেওয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কারের পাশাপাশি জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, এলাকার জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেওয়া হয়ে থাকে তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম সালফার ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩-৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।

পোকা দমনে করার জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করার পরামর্শ দেন। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করতে পারেন।

এসব পদ্ধতিতে রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করবেন।

ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। শতাংশপ্রতি ১.৬ গ্রাম ট্রপার বা জিল বা নেটিভো বা ব্লাস্টিন ৭৫ ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার দেবেন।

এ সময় ধান ক্ষেতে উফরা, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগ দেখা দেয়। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫জি বা কিউরেটার ৫ জি বা ব্রিফার ৫জি প্রয়োগ করতে হবে বলে জানান।

জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে। জমিতে পাতা পোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ১.৫ কেজি/শতাংশ হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।