বিয়ের আগে যেসব বিষয় জানা জরুরী

মানুষের চরিত্রকে সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে চোখকে হেফাজত করতে এবং লজ্জাস্থানের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে হচ্ছে জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত। এটি একটি সামাজিক বন্ধন। যাতে দুটি মানুষ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। বিয়ে সামাজিক ও শরিয়তসম্মত বন্ধন।

আসুন জেনে নেই বিয়ের আগে যা যা জানা জরুরী

– সমসামাজিক, সমসাংস্কৃতিক, সম-আর্থিক ও সমধর্মীয় পরিমণ্ডলে বিয়ে করুন।

– বিয়ের আগে যৌনাচার, একসাথে থাকা বা লিভ টুগেদার একটি বিকৃত চর্চা। এ ধরনের চর্চা পরিণামে আপনার হতাশাই বাড়াবে।

– পাত্র/ পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে মুরুব্বি/ আত্মীয়-পরিজনের সাহায্য নিন, পরামর্শ করুন। তবে নিজে পাত্র/ পাত্রীকে সরাসরি দেখুন এবং কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিন।

– পাত্র/ পাত্রীর সম্পদ ও সামাজিক অবস্থানের চেয়েও গুরুত্ব দিন সুশিক্ষা, আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। দেখুন তিনি মাদক, ঋণ ও ভার্চুয়াল ভাইরাসসহ সব ধরনের আসক্তি থেকে মুক্ত আছে কিনা।

– বিয়ে করার সাথে উপার্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। শারীরিক-মানসিক ও আইনগতভাবে সাবালক ছেলে বা মেয়ে তার প্রয়োজনমতো সময়ে বিয়ে করতে পারে।

– নবীজী (স) বলেন, কোনো নারীকে চারটি যোগ্যতার জন্যে বিয়ে করা যায়। ১. সম্পদ ২. বংশমর্যাদা ৩. রূপ ৪. গুণ। এমন নারী খোঁজ করো যার গুণ আছে। অন্য বিবেচনায় বিয়ে করলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

– পাত্র/ পাত্রীর নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশী হিসেবে কেউ আপনার কাছে জানতে চাইলে আপনি যতটুকু জানেন, বোঝেন তার সম্পর্কে ততটুকুই বলুন। অতি প্রশংসা বা অহেতুক নিন্দা-কোনোটিই করবেন না।

– পাত্র/ পাত্রীর বায়োডাটা ও ছবি দেখেই পছন্দ বা নাকচ করবেন না। অভিভাবকদের কেউ তার সাথে দেখা করে এলে সে অভিজ্ঞতা শুনুন। তারপর নিজে দেখা করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নিন।

– যৌতুক দেয়া ও নেয়া অপরাধ। যৌতুক নেয়া কাপুরুষতা।
আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন প্রতিটি পুরুষের উচিত যৌতুক বর্জন করা।

– ছেলে ও মেয়েপক্ষের বায়োডাটা দেখে উভয়ের সম্মতি থাকলে এপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে সামনাসামনি দেখার ব্যবস্থা করুন। হঠাৎ করে ছেলে বা মেয়ের কর্মক্ষেত্রে/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাকে অপ্রস্তুত করবেন না।

– পাত্র/ পাত্রী তার নিজের বাসায় মানুষ হিসেবে কেমন, এ বিষয়ে জানতে তার নিকটাত্মীয়/ প্রতিবেশীর কাছে খোঁজ নিন।

– বিয়ের আগেই নিজের উপার্জনের পরিমাণ এবং আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে হবু স্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলে তাকে সঠিক ধারণা দিন।

– মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহর বরপক্ষের সাধ্যের মধ্যে রাখুন। দেনমোহর স্বামীর জন্যে একটি দায় বা ঋণ। তাই দাম্পত্য জীবন শুরুর আগে দেনমোহর পুরোপুরি শোধ করুন। বাস্তব কারণে সম্ভব না হলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে তা পরিশোধ করুন।

– বিয়ের দিনটি হলো দায়িত্বপূর্ণ দীর্ঘ যাত্রার প্রথমদিন। তাই শুধু বিয়ের দিনটির সব আয়োজন, জল্পনা-কল্পনায় বিভোর না হয়ে বিবাহিত জীবন কীভাবে সুন্দর করা যায় তা নিয়ে ভাবুন।

– বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় জাঁকজমক করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হবেন না এবং অপচয় করবেন না। মনে রাখুন, যে বিয়েতে অপচয় ও হইহল্লা যত বেশি সে বিয়েতে সুখের পরিমাণ তত কম।

– বিয়েতে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে টাকার অপচয় না করে দুপক্ষ মিলে যৌথ খরচে একটি অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করুন।

– বিয়েতে অঢেল খরচ করলে সমাজের কাছে মাথা উঁচু হবে আর না করলে ‘ছোট মনের’ পরিচয় ফুটে উঠবে, সবাই খোঁটা দেবে-এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

– সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে স্রষ্টার রহমত সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে প্রাত্যহিক ইবাদত/ উপাসনায় যাতে ছেদ না পড়ে, সেদিকে নজর রাখুন।

– বিয়ের আনন্দের সাথে মিষ্টির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে ও অতিথি আপ্যায়নে কাউকে চিনিজাত ‘মিষ্টি’ নামের বিষ না খাইয়ে ফল, খেজুর, বাদাম পরিবেশন করুন।

– কাবিন/ আকদ হয়ে যাওয়ার পর বর-কনের একসাথে থাকতে কোনো বাধা নেই। তাই পরে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা থাকলেও কাবিন হয়ে গেলে কনেকে বাড়িতে নিয়ে আসুন।

– অনুষ্ঠানের ভেন্যু নির্বাচনে মেহমানের সংখ্যা বিবেচনা করুন।
– বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের উপস্থিতি, অতিথি আপ্যায়ন ও যাবতীয় আয়োজনে নির্ধারিত সময়সূচি অনুসরণ করুন।

– অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণপত্রের নির্ধারিত সময় অনুসরণে আন্তরিক হোন।

– কোনো কারণে অতিরিক্ত মেহমান চলে এলে অস্থিরতা বা বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। একে বাড়তি বরকতের উপলক্ষ মনে করুন।

– বর-কনের গায়ের রং, চেহারা, উচ্চতা, বয়স, ডিগ্রি, সামাজিক মর্যাদা, সাজসজ্জা, পোশাক ও আপ্যায়নের ভুলত্রুটিসহ সব ধরনের নেতিবাচক আলাপ থেকে বিরত থাকুন।

– বিয়ের পরে স্বামী/ স্ত্রী ছাড়াও দুই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সময় কাটান। তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করুন। সুসম্পর্ক স্থাপন করুন।