বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত বিশুদ্ধ বাতাস!

মোঃ আশরাফুল আলম: কাচের বোতলে ভরে বিক্রি হচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাস। শুনে অবাক হচ্ছেন? হ্যা, এটিই করছে যুক্তরাজ্যের কোস্ট ক্যাপচার এয়ার নামক একটি কোম্পানি। তারা কাচের বোতলে করে উপকূলীয় এলাকার টাটকা বাতাস বিক্রি করছে। আরও অবাক করার মত বিষয় হল তারা প্রতি বোতলের দাম নিচ্ছে ১০৫ ডলার যা বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ৯ হাজার! মূলত বিশুদ্ধ বাতাসের গুরুত্বকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করতে কোম্পানিটি বোতলবন্দি টাটকা বাতাসের বিক্রি শুরু করে।

কোস্ট ক্যাপচার এয়ার বিশ্বের একমাত্র কোম্পানি নয় যারা এভাবে বাতাস বিক্রি করে। ভিটালিটি এয়ারের মতো বাতাস বিক্রির বড় বড় ব্র্যান্ডও রয়েছে যারা কানাডায় অবস্থিত রকি মাউন্টেন, এয়ার ডি মন্টকুক কিংবা ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চল থেকে বাতাস সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকে। ভিটালিটি এয়ার কোম্পানির বোতলপ্রতি ১০৫ ডলার নিচ্ছে যা ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বোতলজাত বাতাসের স্থান পেয়েছে।

প্রথম স্থানে আছে সুইজারল্যান্ডের জেনুইন মাউন্টেন এয়ার, যারা আল্পসের একটি গোপন স্থান থেকে সংগৃহীত সুইস পর্বতের বাতাস বোতলপ্রতি বিক্রি করে ১৬৭ ডলারে বা ১৪ হাজার ৩০০ টাকা। এই পরিমান টাকা নিয়ে নিঃসন্দেহে কয়েকটি পরিবরের মাসিক খাদ্যের যোগান হয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাপী প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জনই কেবল বায়ু দূষণের কারণে মারা যাচ্ছে। স্ট্রোক থেকে বার্ষিক ১.৪ মিলিয়ন এবং হৃদরোগে ২.৪ মিলিয়ন মৃত্যু মারা যায়। ডব্লিউএইচও রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে স্বল্প-আয়ের
এবং সাধারণ দেশগুলিতে বায়ু দূষণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে এবং উচ্চ-আয়ের দেশ নয়। যে সমস্ত লোকেরা দূষিত বায়ুর পাশাপাশি ঘরের বাইরে বা ঘরের অভ্যন্তরে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকে তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার এবং নিউমোনিয়াসহ শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে
নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৩২৩টি। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫০টি। ট্রাকের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩৩০টি। আর মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৮ লাখ ৯ হাজার ১৮৯টি। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড় বাস থেকে কালো ধোঁয়া বেশি নির্গত হয়। রাতে চলাচলকারী ট্রাক থেকেও কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। তবে করোনা লকডাউনের জন্য এখন কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। গত বছর যখন সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছিল তখন দেখা গিয়েছিল এক নির্মল পরিবেশ।

কালো ধোঁয়া বেশি ছড়ায় মূলত ফিটনেসবিহীন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে। কালো ধোঁয়ার বিষয়টি আদতে একটি কারিগরি ব্যাপার যেটি কিনা খালি চোখে দেখে বোঝাবার উপায় নেই। কালো ধোঁয়া ছড়ায় এমন যানবাহন সড়কে না নামাতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তেমন কোন আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়নি। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির কারনে রাস্তায় গাড়ির পরিমান কম থাকলেও কিন্তু বায়ু দূষন থেমে নেই।

ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে ইটভাটাকে মনে করা হলেও বর্তমান সময়ে বায়ুতে মিথেন গ্যাসের
উপস্থিতি বলছে অন্যকথা। ইটভাটার সাথে সাথে শহরের যে বর্জ্য পোড়ানো হয় সেটাকেও অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে বায়ু দূষনের অন্যতম কারন হিসেবে। বর্জ্য পোড়ানোর জন্য নাকি বায়ুতে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এতে করে দিনকে দিন বাড়ছে গরমের পরিমান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের জুন থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে
যানবাহনের কালো ধোঁয়ার বিরুদ্ধে ৩৮ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া ছড়ানোয় জন্য বিভিন্ন যানবাহনকে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তবে যানবাহনের পাশাপাশি ইটভাটা এবং বর্জ্য পোড়ানোর বিষয়টিকে নজরে আনা একটি অত্যাবর্শকীয় ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।

লেখকঃ পরিবেশকর্মী ও ইউটিউবার, গো উইথ আশরাফুল আলম

লেখকের আরো প্রবন্ধ পড়ুন- ঘরের কোণে এক টুকরো সবুজে মিলবে স্বস্তি টেকসই উন্নয়নে কৃষি ও পরিবেশেক সর্বোচ্চ গুরুত্ব

পরিবেশ রক্ষায় নগর কৃষি বন খাতে এসডিজি পূরণ কঠিন হবে