ফলন ভালো হলেও লিচুর বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

লিচু : ফাইল ছবি

এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। তবে বাগান মালিকরা শঙ্কায় আছেন বিক্রি নিয়ে । প্রতি বছর লিচুর ফুল ফোটার পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা এসে লিচু বাগান কিনতেন। তারাই বাগান পরিচর্যা করতেন এবং ফল পাকলে বিক্রি করতেন। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে বেপারি না আসায় বাগান মালিকদেরই লিচু ঢাকার বিভিন্ন আড়তে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। তাই এ নিয়ে আর্থিক ও শ্রমিক সংকটে আছেন তারা। 

শুক্রবার জানা গেছে। বাগান মালিক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছোট আকারের ৪৮টি লিচু গাছ রয়েছে। ফুল ফোটার পরই নারায়ণগঞ্জের বেপারিদের কাছে লিচু বাগান বিক্রি করে দিয়েছি। তবে বিক্রির সময় দেশে করোনা ছিল না। কিন্তু এখন লকডাউনের ফলে বাইরের বেপারিরা এলাকায় আসছেন না। অনেক বাগান মালিক নিজেরাই কীটনাশক প্রয়োগ ও পাহারার ব্যবস্থা করছেন। এতে বাগান মালিকদের ভোগান্তি ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে।’

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মুয়ীদুল হাসান বলেন, ‘শ্রীপুরে ৭২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় উৎপাদন হয়েছিল প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন। গত দুই বছর ধরে ফলন বাড়ছে। শ্রীপুরের লিচু চাষিরা সচেতন। তারা আগে থেকেই কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার বিষয়গুলো জেনে তা বাগানে প্রয়োগ করেন।

তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামের আরেক বাগান মালিক কায়সার মৃধা খোকন বলেন, ‘আমার তিনটি বাগানে ২০০টি লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকার আসতে শুরু করে। পছন্দমতো দাম পেলেই বাগান বিক্রি করে দিতাম। লিচু লাল হওয়া পর্যন্ত তাদের নিজ উদ্যোগে বাগান পরিচর্যা করতো। এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও লকডাউনের কারণে তারা আসছে না। নিজেরাই বাগান পরিচর্যা করছি। শেষ পর্যন্ত খরচ তুলতে পারবো কিনা শঙ্কায় আছি।’

বাগান মালিক নূরুল আলম বিএসসি বলেন, ‘লিচুর ফুল ফোটার শুরুতে এলাকায় মধুর বক্স নিয়ে মৌচাষিরা আসতেন। তারা ফুল থাকাকালীন প্রায় ১৫ দিনের মতো মধু সংগ্রহ করতেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে লিচুর মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও বাদ পড়েছে।’

আরেক বাগান মালিক এনামুল হক আকন্দ বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় বেপারি না আসলে নিজ উদ্যোগে বাগান মালিকদের ঢাকায় নিয়ে লিচু বিক্রি করতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ বা সঠিক মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

কেওয়া পশ্চিম পাড়ার আলমাছ উদ্দিন বলেন, তার বাগানে ১৫০টি লিচু গাছ রয়েছে। সাড়ে সাত লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন। তবে এবার জেলার বাইরের বেপারি আসেনি। এলাকার বেপারিদের কাছে বিক্রি করেছেন। দুই মাস আগে বিক্রির বায়না পেয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বেপারিরা সময় মতো টাকা দিতে পারেননি। অন্যান্য বছর জেলার বাইরে থেকে বেপারি আসতেন। লিচুর দামও ভালো পাওয়া যেতো। কোনও কোনও বাগান মালিক এবার শ্রমিকের অভাবে সঠিকভাবে ও সময়মতো ওষুধ স্প্রে এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও করতে পারেনি। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, জেলায় প্রায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। গত বছর ফলন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও গাজীপুরে লিচুর ফলন বরাবরই ভালো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে জেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় লিচুর আবাদ সবচেয়ে বেশি।