পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ও তাঁর ১৪ সহযোগীর বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে ।

তদন্তে ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, বিভিন্ন ব্যাংকে ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকার লেনদেন, কানাডায় এক কোটি ১৭ লাখ ডলার পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

আজ বুধবার দুদকের জনসংযোগ দপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

চার্জশিটে পি কে হালদার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন প্রশান্ত কুমার হালদারের মা লিলাবতী হালদার, অবন্তিকা বড়াল, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, পূর্ণিমা রানী হালদার,অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

দুদক সূত্র আরো জানায়, জালিয়াতি ও লুটপাট করে পার পেতে মাস্টার মাইন্ডার পি কে হালদার প্রায় ৩০ কোটি টাকা দিয়ে ল ফার্মের সঙ্গে আইনি সহায়তা পেতে চুক্তিও করেছিলেন। ল ফার্মের দায়িত্ব ছিল ঋণ কেলেঙ্কারিসংক্রান্ত আইনি ঝামেলা থেকে পি কে হালদারকে সুরক্ষা দেওয়া।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলার ও বিশেষ নিরীক্ষায় পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো সমস্যায় যাতে পড়তে না হয় এ জন্যও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিটরদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতেন।

এর আগে দুদক জানিয়েছিল, পি কে হালদারের ঋণ জালিয়াতি অনুসন্ধানে নেমে একের পর এক ভয়ংকর তথ্য পায় কমিশন। সর্বশেষ পি কের নেতৃত্বে ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য পাওয়া যায়। অস্তিত্বহীন এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠান হলো সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, নেচার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বর্ণ, সদ্বীপ করপোরেশন, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, এসএ এন্টারপ্রাইজ, আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অ্যান্ডবি ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দেয়া শিপিং লিমিটেড, ইমার এন্টারপ্রাইজ, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লিমিটেড, মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন লিমিটেড এবং পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

পি কের জালিয়াতি নিয়ে বিএফআইইউয়ের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বি আর ইন্টারন্যাশনাল, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ ও হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. অধিগ্রহণের পরবর্তী তিন-চার বছরে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেটে দুই হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা ৮৩ ব্যক্তির ঋণের আড়ালে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

প্রসঙ্গত, চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স। পি কে হালদার বর্তমানে সেই টাকায় কানাডায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন।