ঢাকার মশা মারবে ড্রোন

‘মশা মারতে কামান দাগা’-প্রবাদের প্রচলন রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। এ প্রবাদকে পুরোপুরি বাস্তবে রূপ না দিলেও, কাছাকাছিই হাঁটছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মশা মারতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করতে যাচ্ছে। ড্রোন দিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে ঢাকার মশা মারবে তারা।

এরইমধ্যে ডিএনসিসি রাজধানীর বনানী লেকে একটি ড্রোন ব্যবহার করে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটি কার্যক্রম চালিয়েছে । সব কিছু জেনে ড্রোন ডেভেলপার দ্বারা পরীক্ষামূলকভাবে একটি ড্রোন তৈরি করেছে। এটি এক ব্যাটারির মাধ্যমে ২৫ মিনিট আর দুইটি ব্যাটারির মাধ্যমে ৫০ মিনিট শূন্যে উড়তে পারে। পাশাপাশি প্রতি মিনিটে ড্রোনটি ছিটাতে পারবে ৫ লিটার মশার ওষুধ। প্রাথমিকভাবে এটি ২০ লিটার ওষুধ বহন করতে সক্ষম। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফল হলে শীঘ্রই ডিএনসিসির জলাশয়, খাল বা লেকে মশা মারতে ব্যবহার করা হবে ড্রোন।

ড্রোন দিয়ে মশা মারার এই উদ্যোগ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের যেসব বড় বড় জলাশয় আছে, সেসব স্থানে মাঝখানে আমরা মশার ওষুধ, লার্ভিসাইড ছিটানোর জন্য পৌঁছাতে পারি না। এসব স্থানে আমরা ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি, যাতে করে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে পারি। পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করেছি। আগামী ৮ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত যে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা হবে, তাতে ড্রোন ব্যবহার করে এর ফলাফল দেখবো। মশক নিধনে আমাদের রুটিন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা সবসময় চিন্তা করছি এর জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করা যায়।

ড্রোন ব্যবহারের বিষয় নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ডিএনসিসি অনেক বড় এলাকা। সব জায়গাতেই আমরা কাজ করছি। তবে অনেক জায়গা যেমন পুকুর, জলাশয় ও খালের সব জায়গায় আমরা বা আমাদের মশকনিধন কর্মীরা পৌঁছাতে পারেন না। সে কারণে ড্রোনের মাধ্যমে মশার ওষুধ প্রয়োগের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মশা নিধনে ডিএনসিসি খুবই তৎপর।

মশার আবাসস্থলে ড্রোনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হবে। আশা করা যায় এটি খুব কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হবে।
তিনি বলেন, যে সব জলাশয় কচুরিপানায় পরিপূর্ণ, সেসব স্থানে ড্রোন ব্যবহার করে লাভ হবে না। কারণ ওষুধটা কচুরিপানার ওপর পড়বে। সেক্ষেত্রে ওষুধ কাজ করবে না। ড্রোন ব্যবহারের আগে কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিতে হবে। কচুরিপানা পরিষ্কার করা না হলে ড্রোন দিয়ে ওষুধ ছেটানোর পর সেই পাতার মধ্যেই ওষুধ থেকে যাবে। ওষুধের কার্যকারিতা থাকে মাত্র ৭ দিন। সেজন্য যেখানে ড্রোন ব্যবহার করা হবে সেই স্থানটির কচুরিপানা আগে পরিষ্কার করে নিলে সুফল পাওয়া যাবে। এসবের পর ড্রোন ব্যবহারে সফলতা আসবে বলে আমার মনে হয়।

আরো পড়ুন- রাজধানীতে অবৈধ মদের কারখানা থেকে গ্রেপ্তার ৬

মশা মারতে ড্রোন পদ্ধতি ব্যবহারের কতটা কার্যকরী হবে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ড্রোন ব্যবহার করে মশার ওষুধ ছিটানোর পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশেই প্রচলিত। আমাদের কিছু কিছু জলাশয় আছে বেশ বড়, যেখানে মশক নিধন কর্মীরা গিয়ে ওষুধ ছিটাতে পারেন না। সেক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারকে আমি পজিটিভভাবেই নিচ্ছি।