ঘরের কোণে এক টুকরো সবুজে মিলবে স্বস্তি  

সবুজে মিলবে স্বস্তি
আশরাফুল আলম : পরিবেশকর্মী ও ইউটিউবার

গ্রীষ্মের এই কাঠফাটা রোদে ঝলসে যখন ঘরের সদর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করবেন তখন যদি মনে হয় এসে পড়েছেন নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক সবুজের দ্বীপে, তবে কেমন হবে? গৃহসজ্জায় সবুজের আবেদন সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হবার মতই চিরন্তন সত্য। ঘরের আঙিনা, বারান্দায় বা ছাদে গাছ লাগানোর চর্চা অনেক পুরনো। তবে ঘরের ভেতরেও আজকাল শোভা পাচ্ছে নানান রকমের বাহারি গাছ। সাধ্যের মধ্যে মনের সাধ ও আভিজাত্য বাড়ানোর জন্য ঘরের ভেতর গাছ আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে বহু গুণে। এক ঝটকায় আপনাকে নিয়ে প্রকৃতির মাঝে যেখানে আছে অনাবিল শান্তি।

ছোট্ট একটি গাছ আপনার ঘরকে সাজিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ফিরে পায় প্রাণ। শহরের এই কর্মব্যস্ত জীবনে মনকে একটু প্রশান্তি করে দিতে পারে অন্দরে অল্প কিছু গাছ। এছাড়াও এই গরমে কিছুটা হলেও ঘরের তাপমাত্রা কমাবে এবং ঘরকে করবে সবুজ ও সতেজ।

ঘরের বাতাসকে পরিশোধন করতে ইনডোর প্ল্যান্ট খুবই কার্যকরী। আবার অন্যদিকে এইসকল শোভা বর্ধনকারী গাজগুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে যদি ঠিকঠাক মতন প্ল্যান করতে না পারা গেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এলোমেলোভাবে গাছ সাজালে ভালো নাও লাগতে পারে। তবে চলুন দেখে নিই কিভাবে ইনডোর গার্ডেন করা যায়।

ইনডোর প্লান্ট ও শোভা বর্ধনকারী গাছ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, এসি প্লান্ট নামক বহুল প্রচলিত কিছু গাছ রয়েছে যা এসি রুমে বেচে থাকতে পার। এগুলোর মধ্যে সিলভার কুইন, চায়নিজ পাম, বাঁশ পাতা বা লাকী ব্যাম্বো, ড্রাসিনা, গোলডেন ড্রাসিনা, ক্যাকটাস, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড এবং ফার্ন এর প্রজাতি, পাতাবাহার এর বিভিন্ন প্রজাতি যেমন মানিপ্ল্যান্ট, ক্যালাডিয়াম, জি জি প্ল্যান্ট, বনসাই, ফরচুন ট্রি, এরিকা পাম, তুলসি ইত্যাদি রয়েছে। ঘরের বিভিন্ন স্থানে আকার ও উচ্চতা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা যায় এই ধরনের গাছগুলো।

ঘরের দরজা বা লিফট এর সামনে রাখা যায় মাঝারি আকৃতির গাছ যেমন, মানিপ্লান্ট ও ড্রাসিনা। বসার ঘরের কর্ণারে পাতাবাহার ও  অর্কিড রাখা যেতে পারে। তুলনামূলক ছোট গাছগুলো রাখা যায় শোবার ঘরে যেমন, অর্কিড, ফার্ণ, ক্যাকটাস, বিভিন্ন প্রজাতির পাম, পাতাবাহার।

ঘরের কর্ণারে টবে লাগানো গাছ ও বারান্দা সাজানো যায় যেকোন ধরণের গাছ দিয়ে। জানালা ও বারান্দার গ্রীলে ঝুলিয়ে দেয়া যায় ঝুলন্ত গাছ। বিভিন্ন প্রকার ফার্ণ ও লতানো উদ্ভিদ ব্যবহার করা যায় ঝুলানো গাছ হিসাবে। ছোট ছোট মাটি বা বাঁশের তৈরি টবে করে জানালা ও বারান্দার গ্রীল এর সাথে ঝুলানো যায় গাছগুলো।

মাটির একধরনের কলসির মত দেখতে টব পাওয়া যায় সেগুলো কিংবা টিনের কন্টেইনারে পানি ভর্তি করে ঘরের কর্ণারে রাখা যায় পানিতে জন্মে এমন গাছ যেমন, কচুরিপানা, শাপলা বা পদ্ম।

গাছ শুধু লাগালেই হবে না, নিতে হবে যত্ন। অল্প আলো ও স্বল্প জায়গায় জন্মানো এইসব ইনডোর প্লান্ট এর পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে শত ভাগ। ইনডোর গাছগুলো একটু সেনসিটিভ হবার কারনে গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটি উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এখন অনেক ধরনের রেডিমিক্স সয়েল পাওয়া যায় যাতে মাটি ও পরিমান মত সার থাকে। সেসবও ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাজারের পাশাপাশি অনলাইনে সুন্দর ডিজাইন করা মাটি, তামা, পিতল, সিরামিক ও সিমেন্টের তৈরি টব পাওয়া যায়। যেহেতু জায়গা আনেক কম সেহেতু অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকৃতির টব নির্বাচন করা ভাল। ঝুলানো গাছের ক্ষেত্রে আট থেকে দশ ইঞ্চি বাশেঁর ঝুড়ি বা মাটির টব ব্যবহার করা ভাল।

টবের উপরের কোনাগুলো ছিদ্র করে গাছসহ টবটিকে রশি বা জিআই তারের সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলেই হয়ে গেল ঝুলন্ত গাছ। শিকা কিনে তাতে করেও ঝুলিয়ে দেয়া যায় টব। গাছগুলো এমন ভাবে ঝুলাতে হবে যাতে অনায়াসে পানি দেয়া এবং পরিচর্যা করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে এক থেকে দুইবার গাছে পানি দিতে হবে। টবের মাটি ভেজা থাকলে পানি না দেয়াই ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি না দেয়া হয়। মাঝে মাঝে স্প্রেয়ারের সাহায্যে গাছের পাতা ধুয়ে দিলে ভাল হয়।

সপ্তাহে অন্তত একবার গাছগুলো রোদে দিতে হবে। দুই থেকে তিন দিন পর পর রোদে দিলে ভাল হয়। রোদ না থাকলে ভালো পরিমান আলো পায় যেখানে, সেখানে রেখে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে গাছের গোড়ার মাটি উল্টেপাল্টে দিলে ভালো হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের শিকড় কাটা না পড়ে। পোকামাকড় আক্রমণ করলে বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এখন অনলাইন এমনকি ফেসবুকেও নানান দরকারী তথ্য পাওয়া যায়।

ইনডোর গার্ডেন করার জন্য পছন্দমত গাছ ও তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নার্সারী এবং হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে। এছাড়াও এসিআই ফার্টিলাইজারের নগর কৃষি উইং ‘এসিআই অরন্য’ ও ব্র্যাক নার্সারিসহ অনেক নার্সারি ফোনকলে ও ফেসবুকে নানাবিধ পরামর্শ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে অনেকেই গাছ ও গাছ লাগানোর উপকরন যেমন টব, মাটি ও সার হোম ডেলিভারির মাধ্যমে বাগানিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে ফেসবুকে নানান ধরনের গ্রুপ তৈরি হয়েছে যেখানে অভিজ্ঞ বাগানিরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি উপদেশও দিয়ে থাকেন।

লেখকঃ পরিবেশকর্মী ও ইউটিউবার, গো উইথ আশরাফুল আলম।

লেখকের আরো আর্টিকেল পড়ুন :

পরিবেশ রক্ষায় নগর কৃষি

টেকসই উন্নয়নে কৃষি ও পরিবেশেক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

বন খাতে এসডিজি পূরণ কঠিন হবে