গোলাপী শহরের ‘জল মহল’

গোলাপী
জল মহল। ফাইল ছবি
শহরের বাড়ি-ভবন, হোটেল-মোটেল, সড়ক, গেট গোলাপী রঙে ভরপুর। লাল ফুলে ভরা সড়কের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক বিভক্তিকরণ লম্বা দেয়াল। শহরের নাম ‘পিংক সিটি’। রঙে মোড়া শহর রাজস্থানের  রাজধানী জয়পুর 
অফিসপাড়া, হাসপাতাল, স্কুলভবন সবকিছুর রঙই গোলাপী। যেদিকেই তাকাবেন, আদি নিদর্শন আর স্থাপত্যশিল্পে ভরপুর; পাহাড়ি এই জয়পুর । তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা ছুটে যান এই শহরে।

জয়পুরে দেখার মতো আছে অনেক কিছুই। সব পর্যটকের পুরো জয়পুর দেখার সৌভাগ্য হয় না। আবার কিছু জায়গায় পা না রেখে কেউ গোলাপী শহর থেকে ফেরেন না। তেমন একটি জায়গা হলো জল মহল। এটি এমন একটি ঘর, যেটা পানির একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে পুরো বছর। ঘর বলছি কেন, ঘরের চাইতে ওটাকে বরং প্রাসাদ বলাটাই শ্রেয়। পানির প্রাসাদ বলে থাকে মানুষ একে।

তিন দিকে পাথরের পাহাড় আর মাঝখানে ছয় কিলোমিটার লম্বা বিশাল নীল জলের হ্রদ। মহলের তিন দিকে হ্রদের পাশে উঁচু পাহাড়। আরেক দিকে পর্যটকদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র। এর প্রবেশমুখে চলে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের আসর। মহল থেকে হ্রদে নামার জন্য একাধিক সিঁড়ি রয়েছে। সবুজ পাহাড়ের গায়ে হলুদ রঙের এই মহল বেশ নজর কাড়ে।

রাজা মহারাজ মাধু সিং জল মহল নির্মাণ করেছিলেন। সাধারণত প্রাসাদ বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে বিরাট কোনো স্থাপনা। কিন্তু জল মহল কিন্তু মোটেও এমন রাজকীয় প্রাসাদ নয়। বরং এই প্রাসাদ তৈরি হয়েছিল মাধু সিংয়ের হাঁস শিকারের জন্যে। ঘর নেই, তবে বিশাল একটা চত্বর রয়েছে প্রাসাদে। আছে বাঁকানো সিঁড়িসহ বাগান।

প্রাসাদের চারপাশে পানি থাকায় এমনিতে এটাকে একতলা বলেই মনে হয়। তবে জল মহল মোটেও একতলা নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, পাঁচ তলার এই প্রাসাদটির চারটি তলাই বছরের বেশিরভাগ সময় পানির নিচে ডুবে থাকে। জল মহলের ভেতরে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর কিছু চিত্রকর্ম। রজপুত আর মুঘল—দুই শিল্পেরই দূর্লভ ছোঁয়ার দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য হবে আপনার।

আরো পড়ুন- খুলে গেল ভূস্বর্গের দরজা

১৮ শতকে নির্মিত এই প্রাসাদটির ভার মাধু সিং এর পর গিয়েছে তার পুত্র দ্বিতীয় মাধু সিংয়ের কাছে। বাবার প্রাসাদকে অবশ্য খুব একটা বাড়ায়নি ছেলে। প্রাসাদের সঙ্গে কেবল একটা বিচারশালা যোগ করেছিলেন দ্বিতীয় মাধু সিং। তবে ব্যাপারটা থেমে থাকে ওই পর্যন্তই। এরপর আর কোনো খোঁজ নিতে আসেনি জল মহলের। ফলে দিনকে দিন অনাদরে অবহেলায় কুঁকড়ে গিয়েছে দালানের সৌন্দর্য।

আশেপাশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক ও শহরের আবর্জনা সব এসে জড়ো হতে থাকে মান সাগরে। এতে কালো পানি ও বিকট গন্ধের কারণে একসময় পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায় মান সাগরের আশেপাশে।

২০১৫ সালে একটি বেসরকারী সংস্থা দায়িত্ব নেয় জল মহল আর মান সাগরের। খুব দ্রুত আবার আগের রূপ ফিরে পায় মহলটি। সেইসঙ্গে সাগরটিও হয়ে ওঠে টলটলে পরিষ্কার। এখন জয়পুর ভ্রমণ মানেই একবার হলেও জল মহল দেখা!

আরো পড়ুন- পর্যটকদের জন্য মিসর ভ্রমণে নতুন সুযোগ