‘স্বল্প মূলধনীর’ যেসব কোম্পানি আয়ের মুখ খুব কমই দেখে

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন

মাজহারুল আলম: গত বৃহস্পতিবার ৬৪টি কোম্পানিকে বিএসইসি থেকে চিঠি দেয়া হয় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রতিটির পরিশোধিত মূলধন হতে হবে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। এ জন্য সর্বোচ্চ এক বছর সময় দেয়া হয়েছে ২০ কোটির নিচের কোম্পানিগুলোকে। এর মধ্যে যেসব কোম্পানির মূলধন ২০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি, তারা সময় পাবে ছয় মাস।

এছাড়া কিছু কোম্পানি আছে মুনাফার মুখ তারা খুব কমই দেখে থাকে। আজকের পর্যালোচনায় থাকছে সেসব কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির জন্য বিএসইসি সুনির্দিষ্ট সময় বেধেঁ দিয়েছে আর এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও  যেমন কম তেমনি মুনাফা অর্জন আরও বেশি হতাশাজনক।

  • ১৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের হাক্কানি পাল্প গেলো ছয় বছরের মধ্যে পাঁচ বছরই ক্ষতির মুখ দেখে আসছে। ২০২০ সালে মুনাফা কিছুটা বাড়লেও শেয়ারপ্রতি আয় ছিল মাত্র ৭ পয়সা। কিন্তু গেলো জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে ফের শেয়ারে ১ টাকা ২৮ পয়সা ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। ২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও শেয়ারপ্রতি ৪৯ পয়সা ক্ষতি হয়েছিল কোম্পানিটির।
  • ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের সমতা লেদারের আয়, লভ্যাংশ- দুটিই চোখ কপালে উঠবার মতোই বলা চলে। ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা আয় করে ৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। যা নাকি বিনিয়োগকারীদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য ছিল না। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ২৮ পয়সা আয় করে ২০ পয়সা লভ্যাংশই ছিল গেলো এক দশকের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ।
  • আলোচনায় থাকা ব্যবসায়ী পি কে হালদারকাণ্ডে নাম আসা নর্দার্ন জুট গেলো জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। শুধুমাত্র ২০০২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ হয়। ওই সময়েই শেয়ারপ্রতি তাদের ক্ষতি হয় ৬ টাকা ২৪ পয়সা। কোম্পানির তিন প্রান্তিক কবে প্রকাশ হবে সেটিও যেন এখন অজনার বিষয়।
  • সিরামিক খাতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ৪৬ পয়সা। কোম্পানিটি গেলো ছয় বছরের চার বছর সামান্য মুনাফা অর্জন করলেও দুই বছর ক্ষতির মুখ দেখে আসছে। ২০২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লস হয় ২ টাকা ৩৩ পয়সা। কোম্পানিটি বেশ ভালো করবে, এমন গুজবে শেয়ার দর ৭০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় ছয় বছর আগে এমন ঘটনা ঘটে। দেখা গেল কোম্পানিটি আয়ে কোনো চমক দেখাতে পারেনি। ভবিষ্যৎ এমন কোনো পরিকল্পনাও তারা জানায়নি, যা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে।
  • ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি বিডি অটোকার গেলো এক যুগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫৩ পয়সা মুনাফা লাভ করতে পেরেছিল। ২০১৮ অর্থবছর আয় ছিল ১ টাকা ৫২ পয়সা। বাকি প্রতিটি বছর আয় ১ টাকার কম ছিল। এ কোম্পানিটির শেয়ার ২ টাকাতেও লেনদেন হয়েছিল কোনো এক সময়। ২০১৭-১৮ সালে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেখান থেকে কমে এখন দর ১৫০ টাকা ছুঁই ছুই। শেয়ারপ্রতি ৬ টাকা ৮৫ পয়সা সম্পদ থাকা কোম্পানিটি ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি আয় করতে পেরেছে ৩৭ পয়সা। এটি ব্যবসা বাড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়ে বিপরীতে তার চেয়ে খারাপ করেছে।
  • ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের আজিজ পাইপ গেলো ছয় বছর কখনও শেয়ারপ্রতি ১ টাকা আয় করতে পারেনি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৪১ পয়সা লোকসান দিয়ে পরের পাঁচ বছরেও সম্মিলিত আয়ও তা ছাড়ায়নি।
  • ২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের রহিমা ফুড তাও গত বছর মুনাফায় ফিরেছে। শেয়ারপ্রতি ৭ পয়সা হিসেবে ‍আয় হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। তবে কোম্পানিটি নতুন করে নারকেল তেলের ব্যবসায় নামার প্রস্তুতি নিয়েছে এবং একে কেন্দ্র করে শেয়ারদর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ৮৩ পয়সা লস কাটিয়ে মুনাফায় আসা জেমিনি সি ফুডের পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটির ২০১৭ সাল পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকার বেশি আয় দেখাতে পারলেও পরের দুই বছর তা থাকে ১ টাকার কম।