কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধন না হলে সংকট তৈরি হবে : মিজানুর রহমান

কাস্টমস এজেন্ট

করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। দেশে পণ্য আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে অসামান্য অবদান রাখছে সিএন্ডএফ এজেন্টরা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রথম ধাপের লকডাউনেও সচল ছিলো দেশের বন্দরগুলো। করোনা প্রতিরোধে কঠোর ও সীমিত লকডাউনের মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে নিরলস কাজ করছেন সিএন্ডএফ এজেন্টগুলো। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট এ খাত নিয়ে দেশ সমাচারের সাথে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: মিজানুর রহমান

দেশ সমাচার : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, বন্দরগুলোর কি অবস্থা?

মিজানুর রহমান : গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এর প্রভাব পড়ে দেশের বন্দরগুলোতে। প্রথম করোনার ধাক্কায় আমারা লকডাউনের আওতার বাহিরে ছিলাম। সেসময় জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের জরুরী গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। সেসময় এসব পণ্য খালাস করে দেশের সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছি আমরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও বন্দরের কার্যক্রম থেমে নেই। পুরোদমে সচল দেশের বন্দরগুলো। এই করোনার সময়ে রেকর্ড পরিমান মালামাল খালাস হয়েছে। সিএন্ডএফ এজেন্টরা রাতদিন কাজ করেছে করোনা কালীন সময়ে।

দেশ সামাচার : চলমান সংকটে সিএন্ডএফ এজেন্টরা অর্থনীতিতে কীভাবে ভূমিকা রাখছে?

মিজানুর রহমান : আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে যে কোনো পণ্য দেশে আসলে বা দেশ থেকে বিদেশ গেলে এজেন্ট হিসেবে সিএন্ডএফরা কাজ করেন। রাজস্ব আদায়ের অন্যতম সূতিকাগার দেশের কাস্টম হাউজগুলো লকডাউনেও খোলা রাখা হয়। সেকারনে শুরু থেকেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন কাজ করেছেন কাস্টমস এজেন্টরা। আমাদের দেশ ট্যাক্স নির্ভর দেশ। সুতরাং আমদানি নির্ভর যতো ধরনের ট্যাক্স কালেক্ট করা হয় তার মধ্যে শতভাগ কাস্টমস এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ হয়। সরাসরি রেভিনিউ কালেক্ট করেন সিএন্ডএফ এজেন্টরা। সুতরাং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পিছনে সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভূমিকা অন্যতম।

দেশ সমাচার : ফ্রন্ট লাইনার হিসেবেই আপনারা কাজ করছেন, সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছেন?

মিজানুর রহমান : করোনার সংকটকালীন পুরো সময়টাতে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। যদিও ব্যাংকার, পুলিশ, ডাক্তারদের মতো আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। সরকার হয়তো বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবেনি। তবে একটি বিষয় সরকারের কাছে দাবি করবো, করোনার প্রণোদনা যদি অন্য ফ্রন্টলাইনাররা পেতে পারে তবে আমাদেরও প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলেই মনে করি। যদিও এর মধ্যে শ্রম অধিদপ্তরে আমরা আবেদন জানিয়েছি। আমরা মন্ত্রণালয়েরে সাথে কাজ করবো।

দেশ সমাচার : সিএন্ডএফ এজেন্টদের কাজ করতে গিয়ে মূল প্রতিবন্ধকতা কী ?

মিজানুর রহমান : আমরা সরকারকে সরাসরি রাজস্ব আহরণ করে দেই। সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে সরাসরি আদায় করে নেয়া হয়। আমাদের কাছ থেকে ক্যালকুলেশন করে অ্যাডভান্সড ট্যাক্স বা এআইটিও কেটে নেয়া হয়। সার্ভিস দেয়ার পর আমাদের কমিশন পাওয়ার বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা বড় অন্তরায় বলে মনে করি এই কমিউনিটির জন্য। সরকারের ট্যাক্স আগেই আদায় করে নিলেও আমাদের আয়ের সিকিউরিটি নেই। এটি পাবো কিনা সে বিয়য়ে সরকাররে কোনো নজর নাই। আমরা সার্ভিস দেয়ার পরে ট্যাক্স এ্যাডভান্স নিয়ে নেয় তবে আমাদের সার্ভিসের কমিশনও এ্যাডভান্স নিয়ে নেয়া উচিত বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে। কিন্তু এটি না হওয়ার কারনে আমরা আমদানিকারকদের পেছনে পেছনে ঘুরতে হয় টাকার জন্য। সে কারনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেহেতু বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ট্যাক্স এবং ভ্যাট নিয়ে নেয়া হচ্ছে সুতরাং আমাদের কমিশনও বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ইনক্লুড করা উচিত। অটোমেটেড করার জন্য কাস্টমস দীর্ঘসময় ধরে কাজ করছে কিন্তু দূর্ণীতির কারনে সেটি বিলম্বিত হচ্ছে। সরকারের এবং জনগণের সদিচ্ছা থাকলে এটি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

দেশ সমাচার : লাইসেন্সিং বিধিমালা নিয়ে আপনারা সরব, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই।

মিজানুর রহমান : কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালায় কালাকানুন করা হয়েছে। লাইসেন্সসিং বিধিমালায় কোনো আইন করে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেনা, যে আইন উভয় পক্ষকে সমান সুযোগ দেয়না সেটি কার্যকর আইন নয়, এরতরফা আইনকে কালাকানুন বলে। বিদ্যমান লাইসেন্সসিং বিধিমালাকে দ্যার্থহীনভাবে কালাকানুন বলতে পারি। এটিতে নাগরিক অধিকার সমুন্নত থাকছেনা। এসব কালাকানুনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। এনবিআর এবং কাস্টমকে আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি সংশোধনীর জন্য। এসব কালাকানুন ব্যবহার করে একশ্রেনীর কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করেন। এটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে অনেক সংকট তৈরি হবে বলে আমি মনে করি। এই লাইসেন্সসিং বিধিমালা নিয়ে দেশের সকল সিএন্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে অসন্তোষ বিদ্যমান। করোনার সংকট কেটে গেলেে আমরা বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হবো।

দেশ সমাচার : কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশন নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি?

মিজানুর রহমান : এসোসিয়েশনের সদস্যদের কল্যাণের জন্য কাজ করাই হলো আমাদের মূল কাজ। সরকারি কর্মকর্তারা অপরাধ করল তাদের কিছু হয়না, অন্যদিকে সিএন্ডএফ এবং আমদানিকারকের শাস্তি হয়, সবাইকে বিচারের আওতায় আনা না হলে করাপশান কখনোই বন্ধ হবেনা। কোনো অফিসার অস৥ উদ্যেশ্যে আইন বর্হিভূতভাবে বেশি রাজস্ব আদায় করার উদ্যোগ নিলে আমরা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের সাথে বসে সমাধানের চেষ্টা করি। এটি আমাদের কাজেরই একটি অংশ। এই করোনাকালীন সময়ে দুইবার আমরা প্রত্যেক সদস্যকে ৫০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি কল্যাণ ফান্ড থেকে। কেউ অসুস্থ্য হলে আমরা চিকি৥সা সহায়তা দেই, কোনো সদস্য মারা গেলে ৫ লক্ষ টাকা পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেই। সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা আমাদের ইশতিহারে ছিলো। সেজন্য আমরা কাস্টমস সরকার এবং সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকার যখন ই পেমেন্টের মাধ্যমে কাস্টমসের টাকা জমা নেয়ার ব্যবস্থা নিলো তখন আপডেট করার জন্য কর্মশালা করেছি। করোনা সংকট কিছুটা কমে গেলে এ খাতের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করবো আমরা।

দেশ সমাচার : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মিজানুর রহমান : দেশ সমাচারকে ধন্যবাদ।