কারা অধিদপ্তরের ৩০৫৩ দিন গ্রন্থের কপিরাইট আবেদন খারিজ

৩০৫৩ দিন

বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবনের হিসেব নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ “৩০৫৩ দিন” কপিরাইটের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কপিরাইট অফিস। শুনানি এবং নথি পর্যালোচনার পর গ্রন্থের সম্পাদক নাজমুল হোসেনের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ জুলাই প্রকাশিত “৩০৫৩ দিন” গ্রন্থটি মূলত গবেষণা নির্ভর গ্রন্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের কোন নথিপত্র কারা অধিদপ্তরের কাছে সংরক্ষিত নেই। গবেষক নাজমুল হোসেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবনের সঠিক হিসেব খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে বইটির পান্ডুলিপি তৈরীর পর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তা হস্তান্তর করেন। তৎকালীন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থটি তুলে দেন।

স্পন্সর সংগ্রহের মাধ্যমে গ্রন্থটি প্রকাশে জেল কর্তৃপক্ষের রাজস্ব খাতের কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। পরবর্তীতে “৩০৫৩ দিন” গ্রন্থের কপিরাইটের জন্য আবেদন করেন সম্পাদক নাজমুল হোসেন। ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি রচয়িতা হিসেবে কপিরাইট সনদ নিয়ে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বই সরবরাহ করেন। এর আগে বইটির সম্পাদক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের কাছে ২০% রয়ালিটির বিনিময়ে বইটি ছাপানোর অনুমতি চাইলেও তা দেয়া হয়নি।

গতবছর ২৮ আগস্ট “৩০৫৩ দিন” গ্রন্থের কপিরাইটের জন্য আবেদন করলে উভয় পক্ষের মধ্যে কপিরাইট অফিসে শুনানি হয়। দুই দফা শুনানির পর কারা অধিদপ্তরের আবেদন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেয় কপিরাইট অফিস। লিখিত সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে গ্রন্থটির সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য মৌলিক এবং কোন গ্রন্থের হুবুহু অনুসরণক্রমে রচিত হয়নি।

বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে কতোদিন জেলে থাকতে হয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান বের করার জন্য যথেষ্ট শ্রম ও সময়সাধ্য। এধরণের মৌলিক ও সৃজনশীল কাজের সম্পাদনার জন্য সম্পাদক কোন সম্মানী গ্রহেণ করেননি এবং উভয়পক্ষের মধ্যে কোন লিখিত চুক্তি হয়নি। কপিরাইট আইনের ১৭ ধারা অনুসারে চুক্তিমুলে যে কর্ম নিষ্পন্ন হয়, সে কর্মের কপিরাইটের অধিকার চুক্তি মোতাবেক হয়। চুক্তিতে কিছু না থাকলে নিয়োগকারীই কপিরাইটের অধিকার লাভ করেন। এই গ্রন্থের ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর অঙ্কিত ৫৫টি প্রতিকৃতির শিল্পী জুলিয়ান ডেভিড তাঁর কাজের শতভাগ কপিরাইট স্বত্ত্ব সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে দিয়েছেন। সকল নথি যাচাই বাছাইয়ের পর মৌলিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে “৩০৫৩ দিন” গ্রন্থটির সম্পাদক কপিরাইট পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইছে নাজমুল হোসেন জানান, ‘কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গ্রন্থটি পুন:মুদ্রণের প্রকাশের অনুমতি চাইলেও আমাকে তা দেয়া হয়নি। গ্রন্থটির সাথে দেশের জাতির পিতার কারাজীবনের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। একারণে আমি কপিরাইটের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমি কপিরাইট সনদ পেয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে ২০% রয়ালিটি প্রদানের লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে কারা অধিদপ্তর নতুন করে কপিরাইটের আবেদন দু:খজনক। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পথে সকল দুয়ার উন্মুক্ত হবে।

এ বিষয়ে কপিরাইটের জন্য আবেদনকারী অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল আবরার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্ট আরো নিউজ – গ্রন্থস্বত্ত্ব নিয়ে অমিতাভের অভিযোগ বানোয়াট, কপিরাইট অফিসের খারিজ

বিতর্কে আটকে আছে বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার : অনিয়ম খুঁজে পায়নি সংসদীয় তদন্ত কমিটি