আসহাবে কাহফের ব্যাপারে আধুনিক গবেষণা

সিয়াম পালন

১৩. আমি তোমার কাছে তাদের ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক।
তারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল। আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। [সুরা : কাহফ, আয়াত : ১৩ (চতুর্থ পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে আসহাবে কাহফের ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ইতিহাসগত ভ্রান্তি আছে। একমাত্র কোরআনই তাঁদের সঠিক ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছে। কিন্তু তাঁদের ইতিহাসের যে অংশ কোরআনে আনা হয়নি, তা নিয়ে তাফসিরবিদ ও ইতিহাসবিদদের বিরোধের অন্ত নেই।

আধুনিক যুগের কোনো কোনো ইতিহাসবিদ খ্রিস্টানদের ইতিহাস এবং ইউরোপীয় ইতিহাসের সাহায্যে আসহাবে কাহফের গুহার স্থান ও কাল নির্ণয়ের জন্য গবেষণা করেছেন।

বেশির ভাগ তাফসিরবিদ ‘আফসুস’ নগরীকে আসহাবে কাহাফের স্থান সাব্যস্ত করেছেন। এটি এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রোমকদের সর্ববৃহৎ নগরী ছিল। এর ধ্বংসাবশেষ তুরস্কের ইজমির (স্মার্না) শহর থেকে ২০-২৫ মাইল দক্ষিণে পাওয়া যায়।

আল্লামা সৈয়দ সুলায়মান নদভি (রহ.) ‘আরদুল কোরআন’ নামক গ্রন্থে জর্দানের পেট্রা শহরের নাম উল্লেখ করে বন্ধনীর ভেতর ‘রকিম’ লিখেছেন। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ তিনি পেশ করেননি যে পেট্রা শহরের পুরনো নাম ‘রকিম’ ছিল। মাওলানা হিফজুর রহমান ‘কাসাসুল কোরআনে’ উল্লিখিত অভিমত গ্রহণ করেছেন। আর এর প্রমাণস্বরূপ তাওরাত ও ‘সহিফা সুইয়ার’ বরাত দিয়ে পেট্রা শহরের নাম ‘রাকেমা’ বর্ণনা করেছেন। (‘দায়েরাতুল মাআরিফ আল আরাবিয়্যা’ থেকে সংগৃহীত)

জর্দানে আম্মানের নিকটবর্তী এক শ্মশানভূমিতে একটি গুহার সন্ধান পাওয়া যায়। সরকারি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৬৩ সালে সেই স্থানটি খননের কাজ আরম্ভ করে। মাটি ও প্রস্তর সরানোর পর অস্থি ও প্রস্তরে পূর্ণ ছয়টি শবাধার ও দুটি সমাধি আবিষ্কার করা হয়। গুহার দক্ষিণ দিকে পাথরে খোদিত বাইজেন্টনীয় ভাষায় লিখিত কিছু নকশাও আবিষ্কার করা হয়। স্থানীয় লোকদের ধারণা, এ স্থানটিই ‘রকিম’। আর এর পাশে আসহাবে কাহফের এই গুহা।

হাকিমুল উম্মত হজরত থানভি (রহ.) বয়নুল কোরআনে তাফসিরে হক্কানির বরাত দিয়ে আসহাবে কাহাফের স্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধৃত করে লিখেছেন, যে অত্যাচারী শাসকের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আসহাবে কাহফ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁর সময়কাল ছিল ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। এর পর ৩০০ বছর পর্যন্ত তাঁরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের জাগ্রত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রাসুল (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর জন্মের ২০ বছর আগ পর্যন্ত আসহাবে কাহফ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। তাফসিরে হক্কানিতেও তাঁদের স্থান ‘আফসুস’ অথবা ‘তরতুস’ শহর সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। বর্তমানেও এর ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান।

এসব ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক তথ্য থেকে আনুমানিকভাবে এতটুকু জানা যায় যে এ ঘটনা ঈসা (আ.)-এর পর এবং রাসুল (সা.) যুগের কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত হয়েছে। বেশির ভাগ বর্ণনা এ বিষয়ে একমত।

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ