২০২৩ সালের মধ্যে সব গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসবে

প্রি-পেইড মিটারের আওতায়

পাওয়ার সেলের `মহাপরিচালক’ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইন বলেন ; বিদ্যুৎ খাতের অর্জন বলতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০০৯ সালের আগে। ২০০৬-০৭ সালের দিকে তখন বিদ্যুতের দাবিতে মিছিল হতো। পানির দাবিতেও মিছিল হতো। পানির সঙ্গে বিদ্যুতের সম্পর্ক হলো পানির পাম্পগুলো তো বিদ্যুৎচালিত। যেহেতু বিদ্যুৎ থাকত না সেহেতু পাম্প চালাতে পারত না। এ কারণে দেশের বহু জায়গায় বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর হয়েছে। তখন পত্রিকাজুড়ে এসব খবর থাকত।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বভার গ্রহণের পর বড় চ্যালেঞ্জই ছিল কিভাবে বিদ্যুতের এ দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া যায়। সেই লক্ষ্যেই তাৎক্ষণিক স্বল্প ও মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনী যে ইশতেহার ছিল, সে ইশতেহার অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের রূপকল্পই ছিল ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসুবিধা পৌঁছে দেওয়া। সেটা নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে হবে। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা যেটা ছিল সেটার আলোকেই (আজকে যেটাকে আমরা কুইকরেন্টাল বলি) তখন বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন হয়। এ চিন্তাটা রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রের মাধ্যমে হয়।

রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রে যখন টেন্ডার করা হয় তখন নানা ধরনের জটিলতা দেখায়। এ কারণে টেন্ডারগুলো চূড়ান্তভাবে আর বাস্তবায়িত হয় না। এই বিশেষ আইন করে ফলপ্রসূ রেজাল্ট পাওয়া গেল, প্রথম বিদ্যুেকন্দ্র চার মাসের মধ্যেই চলে এলো, যেখানে একটি বিদ্যুেকন্দ্র করতে অতীতে ১২ বছরও লেগেছে। স্বল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে পিডিবি প্রকল্প অনুমোদনের আগেই বিদ্যুেকন্দ্রের টেন্ডার হয়ে ইভ্যালুয়েশন হয়ে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। পরে প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পরের দিন তাদের কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাধারণত আমাদের দেশে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়—পরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে পাস হয়, তার পরে টেন্ডার কল করা হয়। দেশের প্রথম বিদ্যুৎ বিভাগ এই সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।

এভাবে আমরা এক বছরের মধ্যেই ৮০০ মেগাওয়াট নিয়ে আসছি। পরে মধ্যম পরিকল্পনার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০০৯ সালে আমাদের যেখানে বিদ্যুেকন্দ্র ছিল মাত্র ২৭টি এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৭টি। সোলার মিনি গ্রেড আগে কখনো হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় একটি প্রসার হয়েছে বর্তমানে। ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম দিয়ে গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।

বায়ু বিদ্যুতের জন্য উইং ম্যাপিং হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৬২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে ২০০৯ সালে ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কিলোমিটার লাইন। ২০০৯ সালে দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত্সুবিধা পেত। এখন পাচ্ছে ৯৭ শতাংশ মানুষ। গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ, এখন হয়েছে তিন কোটি ৬৮ লাখ। শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে, কিন্তু আমরা এক বছর আগে মুজিববর্ষের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় নিয়ে আসব। শুধু যে পরিমাণগত অর্জন তা কিন্তু নয়।

সুশাসনের ফলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দুর্নীতিও কমেছে। আগে সার্বিকভাবে সিস্টেম লস ছিল ১৬.৮৫ শতাংশ, এখন সেটা কমে আসছে ১১.৯৬ শতাংশে। বিতরণ সিস্টেম লস এখন সিঙ্গেল ডিজিটে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় লোডশেডিং নেই। তার পরেও দুটি কারণে লোডশেডিং হয়, এখন বিদ্যুৎ উন্নয়নে প্রচুর কাজ হচ্ছে, যেখানে কাজ হয় সেখানে সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো উৎপাদন ও গ্রাহক বাড়ছে কিন্তু ট্রান্সফিউশন ডিস্ট্রিবিউশন শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের গ্রিডে নতুন নতুন সাবস্টেশন করছি। অটোমেশন করছি।

গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নের জন্য পুরনো পোস্ট-পেইড মিটার বাদ দিয়ে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৩৩ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এ বছরে আরো ১০ লাখের মতো স্থাপন করব। ২০২৩ সালের মধ্যে সব গ্রাহকদের আমরা প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসব।

আরো পড়ুন- আইইবিকে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবো: প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন